যেভাবে চাঁদপুর যাবেনঃ সদরঘাট থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পর লঞ্চ ছেড়ে যায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। ঠিক একই ভাবে চাঁদপুর থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
কোথায় থাকবেন ?
ইচ্ছে করলে দিনে দিনে চলে যেতে পারেন । আর আপনি যদি জল স্থল উভয় দিক দিয়ে চাঁদপুরকে দেখতে চান তাহলে আপনাকে থাকতে হবে। চৌধুরি ঘাটে হোটেল শ্যামলী ও তাজমহল পাবেন। এছাড়া কুমিল্লায় রোডে রয়েছে হোটেল আকবরী। যে কোন একটিতে উঠতে পারেন।
চাঁদপুরে এসে শুনবেন , এটি বৃহত্তর কুমিল্লার অন্তর্ভুক্ত একটি নতুন জেলা। ১৮৫৮ খৃষ্ঠাদ্বে থানা এবং ১৮৭৮ সালে মহকুময় রুপান্তরিত হয়। আর জেলা ২য় ১৯৮৪ সালে। থানা হিসাবে এর নাম ছিল জুবকী বাজার। অতীতে একজন বনিক এবি অঞ্চলে বসবাস করতেন। তিনি জনগনের কাছে চাঁদ সওদাগর নামে পরিচিত ছিলেন। দ্বিমত থাকলেও অনেকেই বলেন তার নামনুসারেই হয়েছে চাঁদপুর।
দর্শনীয় স্থানসমূহ:
ইলিশ: চাঁদপুরের প্রধান আকর্ষন ইলিশ। মাছের রাজা ইলিশ। এই ইলিশ দেশের বিভিন্ন জায়গায় ধরা পড়লেও চাঁদপুরে ধরা পড়া মেঘনায় ইলিশের খ্যাতি রয়েছে দেশে ও বিদেশে। পানি তেকে তোলার সাথে সাথে ইলিশ মাছ মার যায়। তাই জীবিত ইলিশ দেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। আপনার যদি টাটকা ইলিশ দেখার সখ হয় তাহলে নৌবিহারে যেতে পারেন। বড় স্টেশনের ঠোডায় বসে দেখতে পাবেন না। কেননা ইলিশ নদীর তীরে আসে না। আপনাকে ছোট নৌকা ট্রলারে নিয়ে আপনি যাবেন পদ্মা-মেগনায় সঙ্গম স্থলে দেখবেন দুটি নদীর দুধরনের পানি। একটির ঢেউ অন্যটির সাথে মিশে না। ভরা বর্ষায় গেলে কিছুটা ভয় পেতে পারেন। কেউ কেউ রোগ নিরাময়ের জন্য সঙ্গম স্থল থেকে পানি নিয়ে যান বোতলে ভরে। ইচ্ছে করলে আপনি ও নিয়ে আসতে পারেন। এক ঝাঁক ইলিশ দেখে আবার ফিরে আসুন বড় স্টেশনে।পদ্মা মেঘনা আর ডাকাতিয়ার শিলন স্থল চাঁদপুর। ডাকাতিয়ার ব্রিজ পাড় হয়ে চলে যাবেন পুরান বাজার। এককালে এখানেই শহরের গেড়া পত্তন হয়েছিল। কিন্তু নদী ভাঙ্গনের ফলে অতীততের কিছুই দেকতে পাবেন না। তবে কয়েকটি কলকারখানা এবং একটি পুরাতন মসজিদ দেখতে পাবেন। মসজিদটির খুব বড় এবং শতাধিক বছরের পুরাতন। এখানে বিখ্যাত বড়–রার(কুমিল্লা) টুপি কিনতে পাবেন। আপনি নামাজি মানুষ হলে একটি কিনতে পারেন। এ যায়গায় প্রচুর পরিমানে প্রাকৃতিক পরিবেশে বড় হওয়া হনুমান দেখবেন বিল্ডিং এর ছাদে, ঘরের চালে কিংবা ঝোপ ঝাড়ে।
নদী ভাঙ্গন: নদীগুলো চাঁদপুরকে যেমন খ্যাতি দিয়েছে তেমনি চাঁদপুরের দুঃখ মেঘনা। মেঘনার কামড়ে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা নদী গর্ভে চলে গেছে। সামনে কার মাটি কার ঘর, কার বাড়ী। হিসাবের প্রয়োজন নেই। ভাঙ্গছে তো ভাঙ্গছেই। কোন বিরাম নেই। কখনো মতলবে, কখনো হাইমচড়ে আবার কখনো শহরে। ২০০০ সালের দিকে আঘাত হানে মূল শহরের বড় স্টেশনে, মাছ ঘাট ও লঞ্চ ঘাটে। এগুলোর স্মৃতি চিহ্ন নিজ চোখে দেখলে আপনার চোখে জল আসবে।
প্রতিষ্ঠান ( চাঁদপুর সরকারি কলেজ): অনেক্ষণ নৌবিহারের পর বড় স্টেশনের ঠোডাস, পাথরের ব্লকে বসে কিছুক্ষন হাওয়া খেতে পারেন। এখানে একটি মাজার রয়েছে। এটি জিয়ারত করে এবার রিক্সাযোগে চলে আসুন বর্তমান শহরে। এখানে দেখবেন চাঁদপুরের ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান চাঁদপুর সরকারী কলেজ, এখানে এসে শুনবেন ১৯৪৫ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ স্থানান্তরীত করা হয়েছিল। (ভিক্টোরিয়া কলেজ সৈনিকদের ঘাটি থাকায়)। যুদ্ধ শেষ কলেজটি স্বস্থানে চলে গেলে চাঁদপুরবাসী কলেজের দাবী জানায় এবং ১৯৪৬ সালের ১ জুন এ কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
মসজিদ (হাজীগঞ্জ): বাংলাদেশের ঐতিহাসিক মসজিদ গুলোর মধ্যে হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ অন্যতম। শহর থেকে বাগদাদ বাসে সেখানে যাবেন। সেখানে গিয়ে শুনবেন, বাংলা একাদশ শতকের প্রথমার্ধে পীরে কমেল হাজী মুুকিমদ্দিন শাহ এখানে ইসলাম প্রচার করেন। তখন একটি মসজিদ নির্মিত হলেও পাকা মসজিদটি নির্মিতম হয় ১৮৯৪ সালে। এর আয়তন (১০০*২০) হাত। মসজিদের মিনার অনেক দূরে থেকে দেখা যায়।
এছাড়া শহরের সেন গুপ্ত রোড দেখবেন বেগম মসজিদ। ঢাকার নবাবদেরে বেগমগন এ মসজিদের যায়গা দান করেন এবং মসজিদটি বানান হিন্দু মুহুরী হরদয়াল নাগ (১৮১২)।
প্রায় দুশো বছর আগে নির্মিত গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি ভেঙ্গে এখন আরেকটি সুন্দর মসজিদ নির্মান করন হয়েছে।
তবে চাঁদপুরের সবচেয়ে পুরাতন মসজিদটি দেখবেন হাজিগঞ্জ উপজেলার কালচোঁ ইউনিউনের ফিরোজপুর গ্রামে। প্রায় ৬শ বছর আগে সুলতান ফিরোজ শাহ এ মসজিদ নির্মান করেন বলে জানা যায়। ২৭*২১ ফুট আয়তনের ৪/৬ ফুট পুরুত্ব সম্পন্ন দেয়ালের মসজিদটি দেখার জন্য বহুদূরে থেকে ধর্মপ্রিয় মুসলমান আসেন।
কুঠি ( ফরিদগঞ্জ ): পুরানবাজার থেকে বাসে যাবেন ফরিদগঞ্জ। সেখানে দেখবেন বৃটিশদের তৈরী নীল কুঠি। এখন আগের জৌলুশ না থাকলেও ভাঙ্গা ভাঙ্গা বিল্ডংগুলো অত্যাচারী নীল করদের(২০০ বছর পূর্বের) সাক্ষ্য বহন করছে। ফরিদগঞ্জ থেকে ৬কিঃ মিঃ দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থিত। বাতিশাল সুউচ্চ একটি বড় তোরন এখনও আছে।
যেভাবে চাঁদপুর যাবেনঃ সদরঘাট থেকে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রতি ৩০ মিনিট পর লঞ্চ ছেড়ে যায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে। ঠিক একই ভাবে চাঁদপুর থেকে লঞ্চ ছেড়ে আসে ঢাকার উদ্দেশ্যে।
ভাড়া: ডেক-এ জনপ্রতি ১০০ টাকা, চেয়ার ১৪০ টাকা, কেবিন ৫০০-১৫০০টাকা।
হোটেল: চাঁদপুর শহরে থাকার মত বেশ কিছু হোটেল রয়েছে। তারমধ্যে হোটেল তাজমহল, হোটেল জোনাকী, হোটেল শ্যামলী, চৌধুরী ঘাটলা, ব্রীজ মোড়।
খাবার হোটেল: শহরের কালিবাড়ী মোড়ে রয়েছে ঢাকা হোটেল, হোটেল হ্যাভেন ইত্যাদি।চাঁদপুর যাবেন অথচ ইলিশ খাবেন না এমটি কি হয়। ইলিশের মৌসুমে গেলে লাইট চাইনিজ (জেএম সেনগুপ্ত রোড) কিংবা হেডেন ( মেটারনিটি রোড) এ তাজা ইলিশ খাবেন। ফিরে আসার সময় বরফযোগে টাটকা ইলিশ নিয়ে যাবেন।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা ৯ ফেব্রু, ২০১৫ ১০:৪৫ অপরাহ্ণ সোমবার

0 Comments