ঘুরে দেখুনঃ ৭১ এর রাজধানী মেহেরপুর

ঘুরে দেখুনঃ ৭১ এর রাজধানী মেহেরপুর 

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর আ¤্রকাননে। এ সূর্য আবার উদয়ের সূচনা হয় ২১৪ বছর বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজবনগরে। এটি ছিল যুদ্ধমান বাংলার প্রথম রাজধানী। চলুন না, বেরিয়ে আসি বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুর। দর্শনা চিনিকলখ্যাত চুয়াডাঙ্গাও মেহেরপুরের পাশেই অবস্থিত। এক সাথে দুটি জেলাতেই ঘুরে বেড়াতে পারেন। 
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দর্শনা, ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, কিংবা পূর্বাশায় চড়ে যাবেন। বাসে গিয়ে নামবেন কেদার গঞ্জ বাজারে। রাজধানী থেকে জেলা সদরের দূরত্ব ২৯৬ কিঃ মিঃ। জেলা সদরে মোটামোটি মানের হোটেল যাবেন। সেখানে গিয়ে জানবেন, ষোড়শ শতাব্দীতে সমাজ সংস্কারক মেহের উল্লাহ শাহ নামে এক ধর্মীয় চিন্তাবিদ ছিলেন। তার নামানুসারেই হয়েছে মেহেরপুর।
কি কি দেখবেন?
১) সৌধ (মুজিবনগর স্মৃতি সৌধ)ঃ মেহেরপুর শহরের পাশেই মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ১৬০ পুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভবের উপর মূল বেদীকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরো ২০টি স্তম্ভ রয়েছে। যা উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতি ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের সথান টুকু সিরামিক ইট দিয়ে চিহ্নিত। আর ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির স্মরণে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। ২৩টি স্তম্ভ দিয়ে বসানো হয়েছে ১৯৪৮-১৯৭১ এই ২৩ বছরের সা¤্রাজ্যকে। সৌধটি দেখার সময় আপনার মনে পড়বে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিলের কথা, আগের দিন রাতে সিদ্ধান্ত হয় বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে ঘেরা অঞ্চলটির নাম বদলে হবে মুজিনগর। নির্দিষ্ট দিনে কাক ডাকা ভোরে প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এসে উপস্থিত হলেন। নির্দিষ্ট সময়ে সাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। ইতিহাসে পরিনত হল আ¤্রকানন। সেই আম বাগানের বর্তমানে সতিজতা না থাকলেও স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে চিরকাল।
২) আশ্রম (মালোপাড়া) ঃ মেহেরপুর শহরের মালোপাড়ায় দেখুন সাধক পুরুষ বলরামের আশ্রম। তিনি লালন শাহের সমসাময়িক একজন সাধক ছিলেন। তিনি ১২১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পদ্মলোচন মল্লিক নামক জমিদারের বাড়িতে কাজ করার সময় তার নামে চুরির অভিযোগ আনা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বলরাম হাড়ি চাকুরি ত্যাগ করেন। তিনি সংসারও ত্যাগ করেন। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে উৎপাস সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। মালোপাড়ায় এখনোও বলরাম সম্পদায়ের লোকদের দেখতে পাবেন। বলরামের সামধিটি ভালভাবে দেখুন। ১৬ হাত দৈর্ঘ্য ও ১২ হাত প্রস্থ বিশিষ্ট এই সমাধিতে মার্বেল পাথরের কারুকাজ রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এটি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
৩) কুঠি (আমঝুপি) ঃ মেহেরপুরের কোল ঘেষে নির্বাক দাড়িয়ে আছে মহাকালের নীরব সাক্ষী আমঝুপির ঐতিহাসিক নীলকুঠি রেষ্ট হাউজ। এ পথে একদিন মহামতি মোঘলসেনাপতি  মানসিংহের বিজয় রথ ছুটেছে, আলীবর্দীখার মৃগায়, কলাইভের ষড়যন্ত্র ও নীল চাষ বিরোধী  বিদ্রোহের জন্য এস্থান বিখ্যাত।

Post a Comment

0 Comments

0

ঘুরে দেখুনঃ ৭১ এর রাজধানী মেহেরপুর 

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল ২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর আ¤্রকাননে। এ সূর্য আবার উদয়ের সূচনা হয় ২১৪ বছর বর্তমান মেহেরপুর জেলার মুজবনগরে। এটি ছিল যুদ্ধমান বাংলার প্রথম রাজধানী। চলুন না, বেরিয়ে আসি বাংলাদেশের সবচেয়ে ছোট জেলা মেহেরপুর। দর্শনা চিনিকলখ্যাত চুয়াডাঙ্গাও মেহেরপুরের পাশেই অবস্থিত। এক সাথে দুটি জেলাতেই ঘুরে বেড়াতে পারেন। 
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে দর্শনা, ডিলাক্স, চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স, কিংবা পূর্বাশায় চড়ে যাবেন। বাসে গিয়ে নামবেন কেদার গঞ্জ বাজারে। রাজধানী থেকে জেলা সদরের দূরত্ব ২৯৬ কিঃ মিঃ। জেলা সদরে মোটামোটি মানের হোটেল যাবেন। সেখানে গিয়ে জানবেন, ষোড়শ শতাব্দীতে সমাজ সংস্কারক মেহের উল্লাহ শাহ নামে এক ধর্মীয় চিন্তাবিদ ছিলেন। তার নামানুসারেই হয়েছে মেহেরপুর।
কি কি দেখবেন?
১) সৌধ (মুজিবনগর স্মৃতি সৌধ)ঃ মেহেরপুর শহরের পাশেই মুজিবনগর স্মৃতিসৌধ। ১৬০ পুট ব্যাসের গোলাকার স্তম্ভবের উপর মূল বেদীকে কেন্দ্র করে ২০ ইঞ্চি পুরো ২০টি স্তম্ভ রয়েছে। যা উদীয়মান সূর্যের প্রতিকৃতি ধারণ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের সথান টুকু সিরামিক ইট দিয়ে চিহ্নিত। আর ত্রিশ লাখ শহীদের স্মৃতির স্মরণে ৩০ লাখ পাথর বসানো হয়েছে। ২৩টি স্তম্ভ দিয়ে বসানো হয়েছে ১৯৪৮-১৯৭১ এই ২৩ বছরের সা¤্রাজ্যকে। সৌধটি দেখার সময় আপনার মনে পড়বে ১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ১৭ এপ্রিলের কথা, আগের দিন রাতে সিদ্ধান্ত হয় বৈদ্যনাথতলার আ¤্রকাননে ঘেরা অঞ্চলটির নাম বদলে হবে মুজিনগর। নির্দিষ্ট দিনে কাক ডাকা ভোরে প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহমদ এবং অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এসে উপস্থিত হলেন। নির্দিষ্ট সময়ে সাধীনতা যুদ্ধ পরিচালনার জন্য অস্থায়ী সরকারের শপথ অনুষ্ঠান সম্পন্ন হল। ইতিহাসে পরিনত হল আ¤্রকানন। সেই আম বাগানের বর্তমানে সতিজতা না থাকলেও স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে চিরকাল।
২) আশ্রম (মালোপাড়া) ঃ মেহেরপুর শহরের মালোপাড়ায় দেখুন সাধক পুরুষ বলরামের আশ্রম। তিনি লালন শাহের সমসাময়িক একজন সাধক ছিলেন। তিনি ১২১৫ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। পদ্মলোচন মল্লিক নামক জমিদারের বাড়িতে কাজ করার সময় তার নামে চুরির অভিযোগ আনা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বলরাম হাড়ি চাকুরি ত্যাগ করেন। তিনি সংসারও ত্যাগ করেন। বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে উৎপাস সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। মালোপাড়ায় এখনোও বলরাম সম্পদায়ের লোকদের দেখতে পাবেন। বলরামের সামধিটি ভালভাবে দেখুন। ১৬ হাত দৈর্ঘ্য ও ১২ হাত প্রস্থ বিশিষ্ট এই সমাধিতে মার্বেল পাথরের কারুকাজ রয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এটি বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে।
৩) কুঠি (আমঝুপি) ঃ মেহেরপুরের কোল ঘেষে নির্বাক দাড়িয়ে আছে মহাকালের নীরব সাক্ষী আমঝুপির ঐতিহাসিক নীলকুঠি রেষ্ট হাউজ। এ পথে একদিন মহামতি মোঘলসেনাপতি  মানসিংহের বিজয় রথ ছুটেছে, আলীবর্দীখার মৃগায়, কলাইভের ষড়যন্ত্র ও নীল চাষ বিরোধী  বিদ্রোহের জন্য এস্থান বিখ্যাত।

Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.