ঘুরে আসুন রবীন্দ্র-লালন সৃতিধন্য কুষ্টিয়া।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা‘‘ রবীন্দ্রনাথের কুটি বাড়ী লালনের গীতি মীর মোশারফ লিখে গেছেন বিষাদের সৃতি”।
হ্যাঁ , প্রিয় পাঠক। আটনি যদি দেশকে জানতে আগ্রহী হন আজই চলুন বহু সৃতি ধন্য কুষ্টিয়া। বন্ধু-বান্ধব মিলে, প্রাতিষ্ঠানিক বন-ভোজন অথবা শিক্ষা সফরে বেড়িয়ে আসতে পারেন দক্সিন বাংলার এই জেলায়। দুচোখ ভরে দেখবেন রবীন্দ্র যাদুঘরের ওইখানকার মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্য। আসার সময়স কুষ্টিয়ার ঐতিহ্যবাহী কুরফি মালাই কিংবা মৃৎ সমগ্রী নিয়ে আসবেন। ওগুলো আপনাকে বার বার মনে করিয়ে দেবে কুষ্টিয়া ভ্রমনের সৃতি ।
যে ভাবে যাবেন ঃ আপনি সরাসরি ঢাকার গাবতলী থেকে বাসে কুষ্টিয়া যেতে পারেন। ৮০ থেকে ১০০ টাকা জন প্রতি ভাড়া দিলেও আরামে যেতে পারেন। অথবা গাবতলী থেকে দৌলদিয়া গিয়ে তিতুমীর এক্সপ্রেস কিংবা যমুনায় চড়ে দুঘন্টায় পৌছাতে পারবেন।
কবি গুরুর কুঠিবাড়ী ঃ রবী-ঠাকুরের শিলইদাহ যাবেন কুষ্টিয়া শহরের বড় বাজার থেকে। এখানে নৌকায় যেতে টারবেন। আর গ্রীষ্ম বা শীতকালে গেলে গড়াই নদী পাড় হয়ে রিক্সায় যেতে খারাপ লাগবেনা। সেখানে গিয়ে জানবেন, রবীন্দ্রনাথের ঠাকুরের পূর্ব পুরুষ দ্বারকানাথ ঠাকুর ১৮৩০ সালে এখানকার জমিদারীর মালিক হন।১৮৯১ সালে রবীন্দ্রনাথ জমিদারী পরিচালনার দায়িত্ব পান।
বর্তমানে কুঠিবাড়ীটি ৩০ বিঘা জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। বিভিন্ন প্রকার বৃক্ষরাজিতে ভরপুর এই লীলানিকেতন। চিলে কোঠা স্থাপত্যে মূল ভবনে ২ বিঘা জমির উপর পদ্মার ঢেউয়ের মতো বেষ্টনী দেয়াল দিয়ে এটি সংরক্ষিত। প্রথম ও দ্বিতীয় তলায় ২টিসহ মোট ১৮টি কক্ষ রয়েছে। তিন তলাতে দেখতে পাবেন কবির লেখার ঘর। এখানে বসে কবি লিখেছেন বহু কবিতা, গল্প, উপন্যাস ও নাটক।
কুঠিবাড়ীটি ১৯৫৮ সালে থেকে প্রত্মতত্ত¡ বিভাগের ব্যবস্থাধীন রয়েছে। ১৯৭১ সালে যাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলা হয়। এখানে রবীন্দ্রনাথের বিভিন্ন ভঙ্গিমায় বিভিন্ন বয়সের বহু ছবি দেখতে পাবেন। এছাড়া দেখতে পাবেন কবির আসবাবপত্র, দুটি স্পীড বোট, ৮ বেহারা ও ১৬ বেহারা পাল্কি ও কবির ব্যবহৃত নিত্যদিনের সামগ্রী। যে জিনিষটি আপনার মনে দাগ কাটবে তা হচ্ছে, কবির নিজের হাতের লিখা কবিতা ও নোবেল পুরস্কারের সনদ। ২৫, ২৬ ও ২৭ বৈশাখ এখানে জ¤œজয়ন্তী উপলক্ষে মেলা ও বিভন্ন অনুষ্ঠান হয়।
গোপীনাথ মন্দির ঃ শিলাইদহ কুঠির নিকটেই মন্দিরটি অবস্থিত। লিপি থেকে জানা যায় এটি ঊনিশ শতকের প্রথমার্থে নাঠোরের রাজা নির্মান করেন। ১৯৭১ সালে ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর এত নতুন করে বিগ্রহ স্থাপন করো হয়েছে। মন্দিরের প্রবেম পথ, দেয়ালের ইটে অঙ্কিত চিত্রলিপি দেখতে খুবই আকর্ষনীয়।
লালন শাহের মাজার ঃ শিলাইদাহের কুঠিবাড়ী দেখার পর বাউল কবি লালন শাহের মাজার দেখতে পাবেন। শহর থেকে ৮/১০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে চলে যাবেন। সেখানে গিযে আপনার মনে পড়বে “আমি একদিনও না দেখলাম তারে, সময় গেল সাধন হবেনা......অথবা “ রাজেশ্বর রাজা যিনি/চোরের শিরোমনি/নালিশ করিব আমি কোন খানে কার নিকটে। জাতীয় কোন গান। লালন শাহ ১৬ বছর বয়সে ১৮৯০ সালের ১৭ অক্টোবর মারা যান। লালন সর্ম্পকে একটি হৃদয়বিদারক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে। তিনি পিতৃ মাতৃহীন অবস্থায় যখন অসতায় জীবন যাপন করছেন তখন একবার এক মেলা থেকে ফেরার পথে তিনি বসন্ত রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন বসন্তরোগকে সবাই ভয় পেত। লালন পথের ধারে পড়ে রইলেন। তার সহযাত্রীরা তাকে মৃত ভেবে কালা নদীতে ফেলে দিলেন। তকন জৈনিক তাঁতী তাকে পানি থেকে তুলে এনে সেবা-শশ্রæষা করে সুস্থ করে তুলেন। তারপর থেকে এই গ্রামেই ছেঁউরিয়া) বাকী জীবন কাটিয়ে দেন। লালন শাহের মাজরটি দেখুন এটি নতুন করে তৈরি করা হয়েছে পুরোন কোন ছোঁয়া তাতে পড়েনি। দিল্লির বিখ্যাত দরবেশ হযরত নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার মাজার অনুকরনে নির্মিত । কারুকার্য দেখে আভিভ‚ত না হয়ে পারবেননা। এখানে আরো যে সকল মাজার দেখবেন এর মধ্যে কারিনেছা ফকিরাণী, জেলাই শাহ ফকির, কামিনী ফকিরণী ও মলয় শাহের মাজার অন্যতম। ফেরার পথে তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করবেন।
স্মৃতি ৭১ ঃ মুক্তিযদ্ধের স্মৃতিবাহি চেতনা ৭১ দেখুন পুলিশ লাইনে। সমতল ভুমি হতে কুড়ি ফুট উর্দ্ধে স্থাপিত এই ভাস্কর্যের বেদীমূল ১৫*১৬ ফুট আয়তনের বেদী হতে মূল ভাস্কর্যেরে আয়তন ৩*সাড়ে ৪ ফুট। দুহাত দৃড়ভাবে রাইফেল ধরে আছেন উদোম দেহের এক তরুন মুক্তিযুদ্ধা তার পাশে পুলিশ বাহীনির একজন সিপাহী-কাঁধে রাইফেল আর ডানে হাতে উড্ডীন বাংলাদেশের মানচিত্র খচিত পতাকা।
ঐতিহ্যবাহী গোপাল গোশাল ঃ কুষ্টিয়া শহরের মজমপুর গোশালাটি অবস্থিত। একশ বছর আগে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ৬০ বিঘা সম্পত্তির উপর গোশাল কার্যক্রম শুরু হয়। এখানে একটি মন্দির, পাকা দেয়াল, পুকুর, ১০ হাজার গ্যালন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন পানির ট্যাঙ্ক, ১০০ টি গরু থাকার উপযোগী পাকা ঘর, তিন কক্ষ বিশিষ্ট পাকা দালান এবং ৩৬ টি আধা-পাকা ঘর। গোশালা থেকে প্রাপ্ত আয় বিভিন্ন বিভিন্ন সেবা মূলক প্রতিষ্ঠানও আত্মকর্মসংস্থানের বিশেষ ব্যবস্থার ব্যয় হতো আর গাভীর ,দুধ নাম মাত্র মূল্যে দেয়া হতো হাসপাতাল, এতিম খানা ও জেলখানায়।
জঙ্গল মঠ ঃ কুষ্টিয়া শহরের পশ্চিমে পাশের জঙ্গলে একটি মঠ আছে। আপনি সেখানেও যেতে পারেন। এটি নবাব সিরাজ উদ্দৌলার আমলে নির্মিত বলে মনে করা হয়। এর উচ্চতা বর্তমানে ২০ হাত। প্রবেশ পথে বহু চিত্র অঙ্কিত আছে।
পিতলের রথ ঃ অসংখ দেব দেবীর মূর্তি শোভিত কুষ্টিয়া শহরের পিতলের রথও দেখতে পারেন। এখানে প্রতি বছর আষাঢ়-শ্রাবন মাসে রথের মেলা বসে।
যেখানে থাকবেন ঃ আপনি আল মাসুদ(বড় বাজার) হোটেল, জুবিলি(বড় বাজার), ও হোটেল রাজুর (ষ্টেশন) যে কোন একটিতে উঠতে পারেন। আপনার হাতে সময় থাকলে নীলকুঠি সাহেবের বাড়ী এবং জমিদার বাড়ী, রেনউইক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র (ভড়মারা) দেখে আসুন। কুষ্টিয়া ভ্রমণের স্মৃতি আপনার মনে দীর্ঘদিন জারুক থাকবে।
0 Comments