ঘুরে দেখুনঃ রাজা প্রতাপাদিত্যের সাতক্ষীরা
মমিনুল ইসলাম মোল্লাকুল, ওল, আম, ঘোল, সন্দেশ, মাদুর ও গাছের কলম এই সাতটি জিনিসের জন্য বিখ্যাত সাতক্ষীরা। কেউ কেউ বলেন এ থেকেই সাতক্ষীরা নামটি এসেছে। আবার কেউ কেউ সাতক্ষীরাকে পরিবেষ্ঠিত সাতটি নদীকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেন। এ নদী গুলো হল কপোতাক্ষ, কালিন্দি, বেতনা, খোলপটুয়া, সরিচ্ছাপ, ইছামতি ও সোনাই। আবার কেউ কেউ বলেন, নদীয়ার মহারাজ বৃষুচন্দ্রের জৈনেক দেওয়ান সাত অভিজাত ব্রাক্ষণকে এই এলাকায় ৭টি ঘর নির্মান করে দিয়েছিলেন বলে এর নাম হয়েছে সাতঘরিয়া। এটি পরিবর্তন হয়েই হয়েছে সাতক্ষীরা। কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন নামার মাঝে পাবে নাকো সবার পরিচয়, নাম যা-ই হোক বর্তমান সাতক্ষীরা একিট প্রসিদ্ধ এলাকা। চলুন দেখে আসি সপ্ত নদেও দেশ সাতক্ষীরা।
কিভাবে যাবেন?
ঢাকার গাবতলী থেকে খুলনাগামী বাসে উঠবেন। বলাকা বা সোহাগে উঠলে ৭ ঘন্টায় পৌছতে পারবেন। স্টীমাওে গেলে সময় লাগবে ১৬ ঘন্টা। এক রাত থাকবেন খুলনায়। হোটেল সীমান্ত ( কাজল স্মরনী ) অথবা সাউদিয়ায় ( আবুৃল কাশেম সড়ক ) উঠতে পারেন।
দর্শনীয় স্থানসমূহঃ
১) রাজা প্রতাপাদিত্যেও রাজধানী ( শ্যামনগর )ঃ শ্যামনগর উপজেলার দেখবেন রাজা প্রতাপাদিত্যেও রাজধানী। এখানে প্রতাপাদিত্যে কর্তক নির্মিত দূর্গেও পাচিল দেখতে পাবেন। এখানে এসে জানবেন রাজা প্রতাপাদিত্যের একটি সুদক্ষ সামরিক বাহিনী ছিল। এ সম্পর্কে ভারত চন্দ্র রায় গুনবার অন্নদা মঙ্গল কাব্যে লিখেছেন, যশোর নগর ধাম, প্রতাপাদিত্য নাম/ মহারাজ বঙ্গজ কায়স্থ/ নাহি মানে পাতয়ায়/ তকেহ নাহি আঁটে তায়/ ভয়ে যত নৃপতি দ্বারস্থ/ বরপুত্র ভবানীর প্রিয়তম পৃথিবীর/ বায়ান্ন হাজার যার ঢালি, ষোলশ হলেকা হাতি, অযুত তুরঙ্গ লাথি/ যুদ্ধকালে সেনাপতি কালী।
২) যশোরেশ্বরী মন্দিরঃ এটি একটি ঐতিহাসিক মন্দির। এটি দেখে আপনি অভিভূত হবেন। মন্দিরটি এখনও বেশ ঝলমলে। মন্দিরের ভিতরে যশোরেশ্বরীর দেবমূতী স্থাপন করা হয়েছিল। এ মন্দির নির্মানের পর পরই ঘুমঘাটের নাম পরিবর্তিত হয়ে যশোরশ্বেরী নাম ধারন করে। কবি রামের দিগি¦জয় প্রকাশ গ্রন্থের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়, রাজা লক্ষন সেন ঈশ্বরীপুর গ্রামে যশোরশ্বেরী মন্দিও ও তার উত্তর পূর্ব কোনে চন্ড ভৈরবের মন্দিও তৈরি করেন।
৩) প্রতাপাদিত্যের হাম্মামখানাঃ যশোশ্বরী মন্দিরের কিছুটা দক্ষিণ পশ্চিমে একটি পুরানো ইমারত দেখতে পাবেন। পুরো ইমারতি এখনও টিকে আছে। এ ঘরটি হচ্ছে রাজা প্রতাপাদিত্যেও রাজকীয় অতিথিশালার অংশ কিশেষ হাম্মামখানা। হাম্মামখানার কারুকার্য দেথার মতো এটি অতিথিদেও জন্য নির্মান করা হয়েছিল। পার্শ্ববর্তী বাগান ও দিঘির পাড়েও দেয়াল দেয়া হয়। হাম্মামখানায় দুটি বড় ও চারটি ছোট ছোট গম্বুজ ছিল। গম্বুজের মাঝখানে স্ফটিক বসানো ছিল। পূর্বের ঘরের একপাশে তিনটি চৌবাচ্চা আছে। একটি ঘরে পানি গরম করার ব্যবস্থা ছিল। গরম পানি অন্য দুটি চৌবাচ্চায় পানি সরবারহের ব্যবস্থা ছিল। কেউ কেউ বলেন হাম্মামখানাটি দুতলা ছিল। উপরের তলায় শয়ন কক্ষ ছিল।
৪) টেঙ্গা মসজিদঃ মন্দিরের পাশে একটি মসজিদ দেখতে পাবেন। এটি টেঙ্গা মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদে নামজ পড়ে আপনার আগমনকে পুন্যময় করতে পারেন। এ মসজিদেও উত্তর দক্ষিণে ১৩৬ ফুট লম্বা ও পূর্ব পশ্চিমে ৩৩ ফুট চওড়া, মসজিদের গুলো ৭ ফুট পুরু। এতে পাঁচটি গম্বুজ আছে। এ মসজিদের নির্মান নিয়ে বহু মত রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, মহারাজা প্রতাপাদিত্যেও অনেক মুসলমান কর্মচারী ছিল। প্রতাপাদিত্য ১৫৮৭-১৬১১ সাল পর্যন্ত রাজত্ব করেন। তিনি এ মসজিদ নির্মান করেছিলেন বলে জানা যায়। আবার কেউ কেউ বলেন-না এ মসজিদ আরো পরে নির্মিত হয়েছে। প্রতাপাদিত্যেও পতনের পর মোঘল শাসনকর্তার এটি নির্মান করেছিলেন। মসজিদ মন্দির বাদে ্খানে একটি গীর্জা ছিল। তবে হীর্জাটির শুধুমাত্র ভিতরটি আছে। একই জায়গায় তিন ধর্মের তিনটি প্রতিষ্ঠান প্রতাপাদিত্যের উচ্চ মন-মানসিকতার পরিচায়ক।
৫) হাবসিখানা দেখুনঃ এরপর হাবসিখানা দেখুন। এখানে কয়েদিদের ফাঁসি দেওয়া হত। তারপর দুদলিতে চলুন। এটি নদীর তীরে। এখানে যশোর রাজ্যেও নৌবাহিনীর প্রধান ফেডারির ভুডলির নামানুসাওে এর নামকরন করা হয়েছে দুলি।
৬) সুন্দরবনঃ সাতক্ষীরার মু¯œীগঞ্জে সুন্দরবনের মনোরম দৃশ্য দেখবেন। এটি বিশ্বের ৫২২তম বিশ্ব ঐতিহ্য। বনাঞ্চলের পাশে নদীর তীরে হরিণ ও অন্যান্য প্রানী দেখতে পাবেন। দক্ষিনা বাতাস আপনার মনকে জুরিয়ে দেবে।
৭) জমিদার বাড়ি ( শহর )ঃ এবার চলে আসুন শহরে। শহরের উপকন্ঠে দেখুন প্রাননাথ জমিদার বাড়ি। একটি বিরাট দিঘি এবং পিএন উচ্চ বিদ্যালয় দেখুন। এখানে এসে জানবেন, এখানে জন্ম নিয়েছেন গোলাম মঙ্গন, কাজী রেজা, আলহাজ্ব খান বাহাদুর আহসান উল্লাহ, খায়রুল বাসার ও সাহিত্যিক গোলাম ওয়াজেদ আলী।ঐতিহাসিক সাতক্ষীরা ভ্রমনকে আপনি স্মৃতির মণিকোঠায় স্থান দিতে হলে একটি ক্যামেরা নিতে ভুলবেন না যেন-কমপক্ষে ২টি ফিল্ম নিয়ে যাবেন। এখানকার ঐতিহাসিক স্থানগুলোর ছবি উঠাবেন। সেখানে গিয়ে জানবেন সাতক্ষীরার টালী ইটালি রপ্তানী হয়। টালী বানানোর কারখানা ঘুরে দেখতে পারেন। ফিরে আসার সময় সন্দেশ নিয়ে আসতে পারেন।
0 Comments