ঘুরে দেখুনঃ পুরনো শহর নরসিংদী

ঘুরে দেখুনঃ পুরনো শহর নরসিংদী

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো শহর নরসিংদী। সেখানে পাওয়া গেছে প্লেটো- এরিষ্টটল যুগের আড়াই হাজার বছরের পুরনো রাস্তা, মুদ্রা দালান কোঠাসহ আরো অনেক কিছু। হাতে সময় থাকলে ঢাকার অদূরবর্তী নরসিংদী থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
নরসিংদী গিয়ে জানবেন, সেখানে ধনপদ সিংহ নামে এক হিন্দু জমিদার ছিল। সেই জমিদার রাজা উপাদি ধারন করেন। তার পুত্র নরসিংহ পিতার জমিদারী বৃদ্ধি করেন। তিনি প্রাচীন ব্রক্ষপুত্র নদী তীরে মহেশ্বরদী পরগনায় নরসিংহপুর নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এই নরসিংহপুর থেকে নরসিংদী নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।
যেভাবে যাবেনঃ ঢাকার গুলস্তান বাস টার্মিনাল থেকে নরসিংদীগামী বাস পাবেন। ঢাকা থেকে জেলা সদরের দূরত্ব সড়ক পথে ৫৫ কিঃ মিঃ। রেলপথে গেলে আপনার বাসা থেকে কমলাপুর চলে আসুন।
যেখানে থাকবেনঃ হোটেল নিরালা, (লাইব্রেরী পট্রি) হোটেল রিয়াজ (হাজীপুর ব্রীজ সংলগ্ন) হোটেল আজিজ (গঞ্জিপট্রি) অথবা অন্য কোন হোটেলে উঠতে পারেন। খাওয়ার জন্য চিয়াংরাই চাইনিজ রেস্তোরা (শহীদ সাত্তার সড়ক) অথবা ফানি ফাষ্ট ফুড (কলেজ রোড) এর উপর নির্ভর করতে পারেন। কোন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হলে সদর হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও আধুনিক হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
যা দেখবেনঃ নরসিংদী বিশেষ আকর্ষণ ওয়ারী বটেশ্বর। নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলা থেকে ৬ কিঃমিঃ পশ্চিমে লালচে রঙের প্রাচীন পালন গঠিত ওয়ারী ও বটেশ্বর নামে দুটি গ্রামসহ এদের চারপাশের কিছু এলাকায় প্রতœতাত্তি¡ক বস্তু পাওয়া গেছে। ২০০০ সালে এখানে খনন কার্য চালানো হয়। এখানে পাওয়া গেছে ২ হাজার ৪৫০ বছরের প্রাচীন রাস্তা ৪ হাজার বছরের প্রাচীন মানুষের পিট ডুয়েলিংবা গহীন গর্তনিবাস ও ওয়াটার রিজার্ভার। রাস্তাটি পাওয়া গেছে ১ মিটার গভীরে। ডঃ সুফী জানিয়েছেন, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাতের (এনবিপিডডবøউ) ব্যবহার ছিল খ্রীষ্ঠাপূর্ব ৭শ থেকে খ্রিষ্ঠীয় ৫০ অব্দ পর্যন্ত। প্রথমে আবিস্কৃত রাস্তাটির পরিমাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার। প্রস্থে ৬মিটার ও ৩০ সেঃ মিঃ পুরু। এছাড়া আরো একটি রাস্তা পাওয়া গেছে। সেখানে একটি জাদুঘর দেখবেন। এখানে দেখবেন ছাপাংকিত রৌপ্য মুদ্রা, ১৯৯৭ সালে প্রাপ্ত ১৫-১৬ শতক আগের ব্রোঞ্জ মূর্তি ১-২ শতক আগের ব্রোঞ্জের বালা প্রথম  ও দ্বিতীয় শত্বাদীতে প্রাপ্ত দালানের ইট খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ শতকের লৌহ-কুঠার ও প্রস্তুরীঢভ‚ত কাঠ ইত্যাদি। সেখানে গিয়ে জানবেন হানিফ পাঠান পাঠান ও তার বাবা ও পাঠান পরিবার ওয়ারী বটেশ্বরের ঐতিহাসিক কীর্তি রক্ষায় ও খননে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। মূলত তাদের উদ্যেগেই নরসিংদী আজ ইতিহাসে পরিনত হয়েছে।
ঐতিহাসিক আম গাছঃ নরসিংদীর রায়পুরার হাসিমপুর গ্রামে দেখবেন একটি ঐতিহাসিক আম গাছ। এ গাছের বর্তমান মালিক আঃ রহমান ভ‚ঞা। এ আমগাছে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার আম ধরে গাছটির বয়স ৩শ বছর। আঃ রহমানের কাছে শুনবেন এ গাছের আম বিক্রি করতে তার বাবা নিষেধ করেছেন। আম পাকার পর যে কেউ তা নিতে পারেন। আমের মৌসুমে গেলে আপনিও সুমিষ্টি আম নিয়ে আসতে পারবেন। তাঁত শিল্পঃ নরসিংদীর তাতের কাপড় দেশ বিখ্যাত। নরসিংদীর প্রতান্ত অঞ্চলে আপনি ঘরে ঘরে তাঁত দেখবেন। এ জেলায় ১৯ হাজার ৫১২টি কুটির শিল্প রয়েছে। তাঁতীরা তাদের সুনিপুন হাতের ছোঁয়ায় কিভাবে উৎকৃষ্ট মানের লুঙ্গি ও শাড়ী কাপড় তৈরী করে দেখবেন। দেখবেন তাদের জীবন যাপন প্রণালী। নরসিংদীর ঐতিহ্য সাগরকলা । এখান থেকে অল্প দামে সাগরকলা কিনে আনতে পারেন। এখানে এসে জানবেন নরসিংদীতে জন্ম নিয়েছেন বহু কৃতি সন্তান। তাদের মধ্যে গিরিশ চন্দ্র মেন (কুরানের প্রথম অনুবাদ) কথা সাহিত্যিখ ডঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বিএনপির মহাসচীব আঃ মান্নান ভ‚ইয়া ও সাবেক সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল নুরুদ্দিন খান অন্যতম। হাতে আরো সময় থাকলে বালাপুর জমিদার কীর্তি (নবাব বাড়ী) পারুলিয়া ঐতিহাসিক মসজিদ কালীবাড়ি মন্দির (চিনিশপুর) শাহ ইরানী মাজার, বেলাল  পঞ্চকুঠি, সোনাইমুড়ীর টেক আর্শিনগর, বালুচরা ও ঘোড়াশাল সার কারখানা দেখতে পারেন।


Post a Comment

0 Comments

0

ঘুরে দেখুনঃ পুরনো শহর নরসিংদী

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলাদেশের প্রাচীন সভ্যতার ইতিহাস বেশ সমৃদ্ধ। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো শহর নরসিংদী। সেখানে পাওয়া গেছে প্লেটো- এরিষ্টটল যুগের আড়াই হাজার বছরের পুরনো রাস্তা, মুদ্রা দালান কোঠাসহ আরো অনেক কিছু। হাতে সময় থাকলে ঢাকার অদূরবর্তী নরসিংদী থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন।
নরসিংদী গিয়ে জানবেন, সেখানে ধনপদ সিংহ নামে এক হিন্দু জমিদার ছিল। সেই জমিদার রাজা উপাদি ধারন করেন। তার পুত্র নরসিংহ পিতার জমিদারী বৃদ্ধি করেন। তিনি প্রাচীন ব্রক্ষপুত্র নদী তীরে মহেশ্বরদী পরগনায় নরসিংহপুর নামে একটি শহর প্রতিষ্ঠা করেন। এই নরসিংহপুর থেকে নরসিংদী নামের উৎপত্তি বলে মনে করা হয়।
যেভাবে যাবেনঃ ঢাকার গুলস্তান বাস টার্মিনাল থেকে নরসিংদীগামী বাস পাবেন। ঢাকা থেকে জেলা সদরের দূরত্ব সড়ক পথে ৫৫ কিঃ মিঃ। রেলপথে গেলে আপনার বাসা থেকে কমলাপুর চলে আসুন।
যেখানে থাকবেনঃ হোটেল নিরালা, (লাইব্রেরী পট্রি) হোটেল রিয়াজ (হাজীপুর ব্রীজ সংলগ্ন) হোটেল আজিজ (গঞ্জিপট্রি) অথবা অন্য কোন হোটেলে উঠতে পারেন। খাওয়ার জন্য চিয়াংরাই চাইনিজ রেস্তোরা (শহীদ সাত্তার সড়ক) অথবা ফানি ফাষ্ট ফুড (কলেজ রোড) এর উপর নির্ভর করতে পারেন। কোন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা হলে সদর হাসপাতাল, ডায়াবেটিক হাসপাতাল ও আধুনিক হাসপাতালে যোগাযোগ করুন।
যা দেখবেনঃ নরসিংদী বিশেষ আকর্ষণ ওয়ারী বটেশ্বর। নরসিংদী জেলার বেলাবো উপজেলা থেকে ৬ কিঃমিঃ পশ্চিমে লালচে রঙের প্রাচীন পালন গঠিত ওয়ারী ও বটেশ্বর নামে দুটি গ্রামসহ এদের চারপাশের কিছু এলাকায় প্রতœতাত্তি¡ক বস্তু পাওয়া গেছে। ২০০০ সালে এখানে খনন কার্য চালানো হয়। এখানে পাওয়া গেছে ২ হাজার ৪৫০ বছরের প্রাচীন রাস্তা ৪ হাজার বছরের প্রাচীন মানুষের পিট ডুয়েলিংবা গহীন গর্তনিবাস ও ওয়াটার রিজার্ভার। রাস্তাটি পাওয়া গেছে ১ মিটার গভীরে। ডঃ সুফী জানিয়েছেন, উত্তর ভারতীয় কালো মসৃণ মৃৎপাতের (এনবিপিডডবøউ) ব্যবহার ছিল খ্রীষ্ঠাপূর্ব ৭শ থেকে খ্রিষ্ঠীয় ৫০ অব্দ পর্যন্ত। প্রথমে আবিস্কৃত রাস্তাটির পরিমাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার। প্রস্থে ৬মিটার ও ৩০ সেঃ মিঃ পুরু। এছাড়া আরো একটি রাস্তা পাওয়া গেছে। সেখানে একটি জাদুঘর দেখবেন। এখানে দেখবেন ছাপাংকিত রৌপ্য মুদ্রা, ১৯৯৭ সালে প্রাপ্ত ১৫-১৬ শতক আগের ব্রোঞ্জ মূর্তি ১-২ শতক আগের ব্রোঞ্জের বালা প্রথম  ও দ্বিতীয় শত্বাদীতে প্রাপ্ত দালানের ইট খ্রিষ্টপূর্ব ১০০০ শতকের লৌহ-কুঠার ও প্রস্তুরীঢভ‚ত কাঠ ইত্যাদি। সেখানে গিয়ে জানবেন হানিফ পাঠান পাঠান ও তার বাবা ও পাঠান পরিবার ওয়ারী বটেশ্বরের ঐতিহাসিক কীর্তি রক্ষায় ও খননে বিশেষ ভূমিকা পালন করেছেন। মূলত তাদের উদ্যেগেই নরসিংদী আজ ইতিহাসে পরিনত হয়েছে।
ঐতিহাসিক আম গাছঃ নরসিংদীর রায়পুরার হাসিমপুর গ্রামে দেখবেন একটি ঐতিহাসিক আম গাছ। এ গাছের বর্তমান মালিক আঃ রহমান ভ‚ঞা। এ আমগাছে প্রতি বছর লক্ষাধিক টাকার আম ধরে গাছটির বয়স ৩শ বছর। আঃ রহমানের কাছে শুনবেন এ গাছের আম বিক্রি করতে তার বাবা নিষেধ করেছেন। আম পাকার পর যে কেউ তা নিতে পারেন। আমের মৌসুমে গেলে আপনিও সুমিষ্টি আম নিয়ে আসতে পারবেন। তাঁত শিল্পঃ নরসিংদীর তাতের কাপড় দেশ বিখ্যাত। নরসিংদীর প্রতান্ত অঞ্চলে আপনি ঘরে ঘরে তাঁত দেখবেন। এ জেলায় ১৯ হাজার ৫১২টি কুটির শিল্প রয়েছে। তাঁতীরা তাদের সুনিপুন হাতের ছোঁয়ায় কিভাবে উৎকৃষ্ট মানের লুঙ্গি ও শাড়ী কাপড় তৈরী করে দেখবেন। দেখবেন তাদের জীবন যাপন প্রণালী। নরসিংদীর ঐতিহ্য সাগরকলা । এখান থেকে অল্প দামে সাগরকলা কিনে আনতে পারেন। এখানে এসে জানবেন নরসিংদীতে জন্ম নিয়েছেন বহু কৃতি সন্তান। তাদের মধ্যে গিরিশ চন্দ্র মেন (কুরানের প্রথম অনুবাদ) কথা সাহিত্যিখ ডঃ আলাউদ্দিন আল আজাদ, বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান, বিএনপির মহাসচীব আঃ মান্নান ভ‚ইয়া ও সাবেক সেনা প্রধান লেঃ জেনারেল নুরুদ্দিন খান অন্যতম। হাতে আরো সময় থাকলে বালাপুর জমিদার কীর্তি (নবাব বাড়ী) পারুলিয়া ঐতিহাসিক মসজিদ কালীবাড়ি মন্দির (চিনিশপুর) শাহ ইরানী মাজার, বেলাল  পঞ্চকুঠি, সোনাইমুড়ীর টেক আর্শিনগর, বালুচরা ও ঘোড়াশাল সার কারখানা দেখতে পারেন।


Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.