ঘুরে দেখুনঃ নিসর্গ সৌন্দর্যমন্ডিত জেলা-ভোলা
মমিনুল ইসলাম মোল্লাবাংলাদেশের সবচেয়ে বড় দ্বীপ ভোলা। দেশের সর্ব দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর ঘেষে পানিবেষ্টিতে দ্বীপে ভোলা জেলার অবস্থান। দ্বীপটির বয়স প্রায় তিন হাজার বছর। এটি প্রাচীন বাকলাচন্দ্র দ্বীপ এলাকার অংশ ছিল। ভোলাগাজী নামে একজন সাধকের নামে জেলার নামকরণ করা হয়। আপনি যদি ভ্রমণ প্রিয় লোক হন তাহলে ভোলায় গিয়ে আনন্দ পাবেন।
কিভাবে যাবেনঃ ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে যেতে পারেন। এখান থেকে কোকো, গেøারী অব শ্রীনগর, সম্পদ, কর্ণফুলী, ফ্লোটিলা ও বালিয়া সকাল থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে ভোলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। আপনি সন্ধ্যায় সঞ্চে উঠতে পারেন। ঢাকা থেকে ভোলার দূরত্ব ৩১৭ কিঃ মিঃ। ভোলা শহরে রাতে থাকার জন্য ভাল হোটেল পাবেন।
কি কি দেখবেনঃ
(১) ভৌগোলিক অবস্থানঃ বাংলাদেশের মানচিত্রের দিকে তাকালে দেখবেন দেশের সর্ব দক্ষিণে ভোলা জেলার অবস্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সদ্বীপ। এর আয়তন ৩৪০৩.৪৮ বর্গ কিলোমিটার। ভোলার উত্তরে লক্ষীপুর ও বরিশাল জেলা, দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পূর্বে লক্ষীপুর ও নোয়াখালী জেলা, মেঘনা নদী এবং শাহবাজপুর চ্যানেল পশ্চিমে পটুয়াখালি, বরিশাল জেলা ও তেতুঁলিয়া নদী, নদী মোহনায় চর জহিরউদ্দিন, পাতিলা, চালচর, চর কুকরি-মুকরিসহ বহু চর জেগে উঠেছে। এসব চরে গিয়ে আপনি নিরিবিলি সময় কাটাতে পারেন।
(২) পাখির রাজ্যঃ শীতকালে ভোলার চরাঞ্চল পাখির রাজ্যে পরিণত হয়। ট্রলার যোগে বিভিন্ন চরে যাবেন। এগুলো মাছ ধরার ট্রলার। গভীর সমুদ্রে বেশ বড় বড় ট্রলারগুলো অবস্থান করে। কোন কোন সময় জেলেরা মাস খানেক সময়ও অতিবাহিত করে সাগরগর্ভে।
চরের যেদিকে তাকাবেন সেদিকেই দেখবেন রঙ-বেরঙ্গের অতিথি পাখি। সেখানকার লোকদের মুখে শুনবেন শীতের আগেই পাখীগুলো এই চরে আসে। ৩/৪ মাস থাকার পর আবারো তাদের দেশে চলে যায়। আপনি পাখিদের সাথে মিতালী করতে পারেন। তবে সাবধান! দুপুরের খাবারের জন্য পাখি শিকার করতে যাবেন না কিন্তু!
(৩) সাগর কন্যা (মনপুরা)ঃ দ্বীপ জেলা ভোলার অন্যতম আকর্ষন মনপুরা। মনপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের সাথে যোগ হয়েছে ‘মনপুরা খামার বাড়ি’। ১৬১ একরের বিশাল খামার বাড়িটি মালিক চৌধুরী পরিবার।
খামার বাড়িতে কয়েকশ প্রজাতির গাছ, চিংড়ি প্রজেক্ট, আমবাগান ও নারিকেলের সারিসহ কৃত্রিম অরণ্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। আপনি খামার বাড়িটি ঘুরে দেখতে পারবেন। খামার বাড়ির প্রবেশ দ্বারেই রয়েছে অতিথি আপ্যায়ন কেন্দ্র। পাকা চত্বরের উপর খাড়া মডেলের আচ্ছাদন রয়েছে।
খামার এলাকায় ঘুরতে ঘুরতে জানবেন-মনপুরার এক সময় পর্তুগীজ জলদস্যুদের ঘাটি ছিল। সম্ভবত ১৫১৭ সালে তারে এখানে বসতি গড়ে তোলে ছিল। এ ঘাটি এখন বিলিন হয়ে গেছে। সেখানকার অধিবাসীদের মুখে শুনবেন- ১৯৭০ সালের ঘুর্নিঝড়ের কথা। তখন ৩৫,০০০ লোকের মধ্যে ২৫,০০০ মারা গিয়েছিল। পানি উঠেছিল ১৫/২০ ফুট। সেদিনের কথা মনে উঠলে এখনও স্বজন হারা লোকদের চোখ পানিতে ভরে যায়।
(৪) মসজিদ (বুড়ি মসজিদ)ঃ ভোলা শহর থেকে উত্তর দিকে ৮/১০ টাকা রিক্সা ভাড়া দিয়ে আপনি যেতে পারেন বুড়ি মসজিদে। বিখ্যাত বুড়ি মসজিদটি ২০০ বছরের ঐতিহ্যে বহন করছে। মসজিদের চার কোণায় চারটি গম্ভজ রয়েছে। ১২৮০ বঙ্গাব্দে এটি তৈরী করা হয়েছিল বলে অনুমান করা হয়।
(৫) সমাজ সেবক নারী বুড়ির স্মৃতিঃ মহীয়সী নারী বুড়ির কথা শুনবেন এলাকাবাসীর মুখে। তিনি কোন জমিদার কিংবা উচ্চ বংশিয় লোক ছিলেন না। তার নাম ছিল উমরজান বিবি। তিনি শুধুমাত্র কোরআন শরীফ পড়তে পারতেন; পুথিগত বিদ্যা ছিল না। তিনি ছিলেন অত্যন্ত পর্দানশীল ধার্মিক রমনী। তিনি পর্দানশীল হয়েই সমাজ সেবা করতেন। তিনি একটি মসজিদ, একটি দীঘি খনন ছাড়াও বহু সমাজ হিতৈষী কাজ করে গেছেন।
(৬) গ্যাস ফিল্ড পরিদর্শনঃ তারপর যেতে পারেন শাহবাজপুর গ্যাস ফিল্ডে, অনুমতি নিয়ে ভিতরে গিয়ে গ্যাস ফিল্ডের গ্যাস উৎপাদন প্রক্রিয়া দেখতে পারেন।
(৭) নৌ-ভ্রমনঃ ভোলার অন্যতম নদী তেতুলিয়া, এ নদী ভোলাকে বরিশালের মূল ভ‚-খন্ড থেকে ভোলাকে পৃথক করেছে। এ নদীর গড় প্রশস্থতা ৬ কিলোমিটার এবং দৈঘ্য ৮৪ কিলোমিটার। নৌ ভ্রমন করে দুলিয়া বাজার, গঙ্গাপুর বাজার, বালাইয়া বন্দর ও দাসমনিয়া বাজারে যেতে পারেবন।
(৮) কি নিয়ে আসবেনঃ ভোলা থেকে ফিরে আসার সময় সেখান কার জনপ্রিয় মিষ্টি নকুলদানা নিয়ে আসবেন। দৌলতখান উপজেলার নকুলদানা বিখ্যাত। ঝাল-চানাচুরের মত বন্ধুদের আড্ডায় কিংবা ভোলা থেকে ফিরার পথে কিছুর সাথে চিবিয়ে চিবিয়ে দীর্ঘ সময়ে খাওয়া। লখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষক ,সাংবাদিক, ও কলামিস্ট,কুমিল্লা।
0 Comments