ভাটি কন্যা কিশোরগঞ্জ, হাওর- বাওড়ের দেশ কিশোরগঞ্জ
ভাটি কন্যা কিশোরগঞ্জ, হাওর- বাওড়ের দেশ কিশোরগঞ্জ। ইসা আর দেশ কিশোরগঞ্জ। কিশোরগঞ্জ চলুন ২দিন সময় হাতে নিয়ে সবুজ শ্যামলিমায় আচ্ছন্ন কিশোরগঞ্জ থেকে ঘুরে আসি বর্ষার দিনের ভাটি কন্যাকে শীতের হিসেবে অন্যরকম দেখতে পাবেন।যে ভাবে যাবেন ঃ
সড়ক পথে যেতে পারেন ঢাকার মহাখালী থেকে কিশোরগঞ্জ বাস পাবেন। এছাড়া ট্রেনে গেলে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে এগার সিন্ধুর ট্রেন ছাড়ে সকাল ১০টায়। এটি দেড়টায় কিশোরগঞ্জ গিয়ে পৌছবে। ঢাকা থেকে সড়ব পথে দূরত্ব ১৪০ কিঃ মিঃ এবং রেলপথে ১৩৫ কি্।ঃ
যেখানে থাকবেন ঃ হোটেল মোবারক ( স্টেশন রোড) হোটেল ঈশা খাঁ (ঈশাখাঁ সড়ক) এছাড়া হোটেল ডিউতে (বটতলা সড়ক) থাকতে পারেন। খাওয়ার জন্য নির্ভরযোগ্য রেস্টুরেন্ট হচ্ছে হোটেল মদিনা, নিউমনি গোপাল সুইট ইত্যাদি।
কি কি দেখবেন ঃ সেখানে গিয়ে শুনবেন বত্রিশ প্রমাণিক পরিবারের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কৃষ্ণদাস প্রমাণিক, তার ৬ষ্ঠ ছেলে নন্দকিশোরের কিশোর এবং তার প্রতিষ্ঠিত গঞ্জ থেকেই নামকরন হয়েছে কিশোরগঞ্জ। হোটেলে কিছুক্ষন বিশ্রাম করে বেড়িয়ে পড়–ন ভাটি কন্যাকে দেখতে।
১) মসজিদ (কুতুব শাহের মসজিদ, অষ্টগ্রাম) ঃ ষষ্ঠদশ শতাদ্বীর শেষে ভাগে নির্মিত এই মসজিদ। এটি বাইরের দিকে ৪৫*২৫ ফুট এবং ভেতরের দিকে ৩৬*১৬ ফুট। চারকোনায় চারটি আট কোনাকার মিনার আছে। এর উপর পাঁচটি গম্বুজ রয়েছে মসজিদের পাশেই দেখবেন পাঁচ পীরের মাজার। এখানে কুতুব শাহের মাজারও দেখতে পাবেন।
এছাড়া নান্দাইলে দেখুন মোয়াজ্জেমপুর মসজিদ। এটি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের(১৪১৩-১৫৩৯) আমলে নির্মিত। পূর্ববঙ্গের শাসন কার্য মোয়াজ্জেমপুর থেকে পরিচালিত হতো। এ মসজিদটি ৪০*২০ফুট আয়তনের। এ মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা আবদাল খাঁর বংশধরগণ এটি সংস্কার করে পুরো মসজিদটিকে দৃষ্টিনন্দন করেছেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা শহরেই দেখবেন শহীদী মসজিদ। ১৯৪০ সালে মাওলানা আতাহার আলী খান এটি সংস্কার করেন। তখন কোন এক দুর্গাপুজায় হিন্দুরা মসজিদের পাশ দিয়ে মিছিল করে যাওয়ার সময় মুসলমানদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে কয়েকজন মুসলমান শাহাদাত বরণ করে। এর পরে থেকে মসজিদটি শহীদী মসজিদ নামে পরিচিত লাভ করে। এছাড় হযরত নগরে দেখবেন বিখ্যাত পাগলা মসজিদ।
২) ঈদগাহ ( শোলাকিয়া) ঃ কিশোরগঞ্জ শহরের পূর্ব প্রান্তে দেখুন বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ঈদগাহ। একবার এখানে সোয়ালাখ লোক ঈদের নামাজ পড়েছিল বলে এর নাম হয়েছে শোলাকিয়া। ঈদের সময় গেলে ঈদগাহ কর্র্তৃপক্ষের ব্যবস্থাধীনে থাকা -খাওয়ার সুযোগ করবেন।
৩)আখড়া (ল²ী নারায়ন )(শ্যামসুন্দর আখড়া)ঃ শহরের শিল্পকলা একাডেমী সংলগ্ন আখড়া মন্দির দেখুন। এ মন্দির স্থাপিত শ্যামসুন্দর বিগ্রহ দেখুন। এখানে এক সময় একটি পাঠশালা ছিল গৌরচন্দ্র পাঠক নামে একজন বিখ্যাত পন্ডিত এখানে দীর্ঘদিন পাঠদান করেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে এটি বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৪) ঐতিহাসিক স্থান ( এগার সি›দ্ধুর) ঃ প্রাচীন কীর্তিতেভরপুর এগার সি›দ্ধুর এখানকার মসজিদ, দূর্গ, শিলা-লিপিসহ প্রাচীন কীর্তি আপনাকে আকৃষ্ট করবে। এলাবাসীর মুখে শুনবেন এখানে বাংলার বার ভ‚ইয়ার নেতা ঈসাখানের সাথে মুঘল সেনাপতি মানসিংয়ের যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে হেরে ঈসা খান জঙ্গলবাড়িতে আশ্রয় নেন পরবর্তীতে দুপক্ষের মধ্যে সন্ধি হয়। ঈসা খান এখানে একটি দূর্গ নির্মান করেছিলেন তবে এখন সেসবের কোন চিহ্ন খুজে পাবেন না। স্মৃতিতেই এগুলো ভাসবে। ঈসা খানের পুত্র মুসাখানের সাথে মুঘলদের যুদ্ধের (১৬২২ খৃঃ) মাধ্যমে পুরো বঙ্গে মুঘল শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
৫) মঠ ( করিমগঞ্জের সতীদাহ মঠ) ঃ ব্রিটিশ শাসনামলে এদেশে সতীদাহ প্রথা ছিল। ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিকের সময় এটি নিসিদ্ধ হয়। বাংলা ১২৩৪ সনের ২৬ বৈশাখ গুজাদিয়ার বিখ্যাত তালুকদার বাড়ির এক লোকের মৃত্যু হলে তার চিতায় তার স্ত্রী সহমৃতা হন। এব্যাপারে মামলা কার হলে জ্ঞাতিদের পক্ষে থেকে বলা হয় জ্ঞানদা সুন্দরী স্বেচ্ছায় সহমৃত হয়েছেন। কজেই বলপ্রয়োগের কোন প্রশ্নই উঠে না? সরাকর পক্ষের প্রশ্ন ? জ্ঞানদা সুন্দরী যদি স্বেচ্ছায় সহমৃত হবেন, তবে জ্ঞাতিরা চিতা জ্বালানোর আগেই তার চারপাশে খুটি গেড়ে তাতে বাঁশের বেড়া দিয়েছিলেন কেন ? জ্ঞাতিপক্ষ এর কোনো সদুত্তর দিতে না পারায় জ্ঞানদা সুন্দরীর বড় ছেলে গয়রাম চক্রবর্তীর ছয়মাসের জেল হয়। পরে মায়ের স্মৃতিকে স্মরণীয় করে রাখার জন্য চিতা স্থানে তৈরী করেন জ্ঞানদা সুন্দরী সহমরন মঠ।
৬) সেতু (ভৈরবের জোড়া সেতু) ঃ মেঘনা নদীতে দেখুন ভৈরবের জোড়া সেতু। রেল সেতুটি ব্রিটিশ আমলে বানানো। সড়ক সেতুটি সম্প্্রতি তৈরী হয়েছে। এখানে বোটি করে মজা পাবেন।
৭) মাজার (শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমী ) ঃ কিমোরগঞ্জের তারাইলের মদনপুরে বিশিষ্ট ইসলাম প্রচারক শাহ মুহাম্মদ সুলতান রুমীর মাজার দেখুন। ১শত ২০ জন শিষ্যসহ তিনি মদনপুর গ্রামে আস্তানা গেড়েছিলেন। তিনি নেত্রকোনাসহ পাশ্ববর্তী এলাকায় ইসলাম প্রচার করেছিলেন।
৮) জঙ্গল বাড়ী (কিশোরগঞ্জ) ঃ ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ীতে গিয়ে শুনবেন ঈশা খার বংশধর ফিরোজ খার সাথে ময়মনসিংহের কেল্লা তাজপুরের খাজা ও সমান খার বিরোধ ছিল। বিরোধ মেটাতে ফিরোজ খা ওসমান খার মেয়ে সখিনাকে বিয়ের প্রস্তাবে প্রত্যাখ্যাত হয়ে অপহরন করে নিয়ে আসেন।পরে ফিরোজ খানকে বন্দী করা হলে সখিনা পুরুষের বেশে যুদ্ধ করে জয় লাভ করেন। এ সময় ফিরোজ খা সখিানাকে প্রত্যাখান করার গুজবে সখিনা যুদ্ধের ময়দানেই মারা যান। এবং সেখানেই সমাহিত করা হয়।
৯) চন্দ্রাবতীর জন্ম স্থান ( পাতুয়াইর) ঃ বাংলার প্রথম মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর মন্দির দেখুন পাতুয়াইর ষোড়শ শতকে নির্মিত মন্দিরটি দেখুন।
১০) বাড়ি (বত্রিশ) ঃ এখানে দেকবেন সুরম্য প্রাসাদ বত্রিশ। এটি অষ্টাদশ শতাদ্বীতে নির্মিত। পাশেই বিরাট দিঘি দেখবেন।
১১) স্বাধীনতা সমাধি (ভৈরব)ঃ ঢাকা-সিলেট ও ভৈরব কিশোরগঞ্জ মহাসড়কে সংযোগস্থলে নির্মিত হচ্ছে “দুর্জয় ভৈরব”। এখানে ১৩ জন মুক্তিযুদ্ধার নাম দেখবেন। এখানে এসে জানবেন কিশোর গঞ্জের প্রথম শহীদ পাগলা মামার কথা।
আরো দেখুন ঃ হাওড় এলাকা ঘুরে দেখতে পারেন। এছাড়া ও রাজশাহী মসজিদ, ধোলাই সাহেবের বাড়ী, জহিরুল ইসলামের বাড়ি ও মেডিকেল কলেজ (বাজিতপুর) ছোট বড় ৫২টি নদীর মধ্যে মেঘনা, নরসুন্দ ও ব্রক্ষপত্র যে কোন নদীতে বোটিং করে মজা পাবেন।
0 Comments