বিশ্ব ঐতিহ্য- বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ

বিশ্ব ঐতিহ্য- বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলাদেশে যে কটি বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ অন্যতম। এটি ইউনেস্কা কতৃক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ১৯৮৩ সালে চিহ্ণিত হয়েছে। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় হলেও সকল ধর্মের লোক ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি পরিদর্শনে অনায়াসে যেতে পারেন। আপনিও যে কোন অবসরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এ মসজিদটি দেখে আসতে পারেন।

অবস্থানঃ খুলনা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এবং বাগেরহাট জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বাগেরহাট খুলনা মহাসড়কের পাশেই মসজিদটি অবস্থিত।

আয়তনঃ অতীতের অনেক পুরাতন মসজিদ হলেও মসজিদটি বেশ বড়। আগেকার মসজিদগুলোর আয়তন সাধারণত এত বড় হতোনা। মুসলিম জনসংখ্যা কম হওয়ায় মসজিদগুলোতে ২/৩ কাতারের বেশি লোক হতোনা। ষাট গম্বুজ মসজিদটি কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে বড় আকারে তৈরি করা হয়েছিল। কারণ এটি শুধু নামাজ আদায়ের জন্যই ব্যবহৃত হতোনা। এতে সালিস, সভা ও সৈনিক সমাবেশ ঘটানো হতো।  একে  খানজাহান আলীর মন্ত্রণালয় বলেও কেউ কেউ অভিহিত করেছেন।
মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন, উত্তর-দক্ষিণে ১৬০ ফুট এবং পুর্ব পশ্চিমে ১০৪ ফুট। এছাড়া ভেতরের দিকের আয়তন ১৪৩*৮৮ফুট এবং উচ্চতা ২২ ফুট।

দেয়ালঃ মসজিদের দেয়ালগুলো বেশ মজবুত। মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব ৮ফুট। এত বেশি পুরত্বের দেয়াল সম্ভবত কোন মসজিদে নেই।
ছাঁদঃ জুতা খুলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করুন। খেয়াল করে দেখুন এটি ৭টি আইল ও ১১টি ব্যাতে বিভক্ত। এগুলোর প্রতিটি অংশ চৌচালা আকৃতির ভোল্টে আচ্ছাদিত। বাংলায় এই চৌচালা আঙ্গিকের ব্যবহার এখানেই প্রথম দেখা যায়। পূর্ব দেয়ালের প্রশস্ততম কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ এবং পশ্চিম দেয়ালের প্রশস্ততম কেন্দ্রীয় মেহরাবের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারি ”বে” মসজিদটিকে উত্তর ও দক্ষিণে বিস্তৃত  দুটি সমান অংশে বিভক্ত করেছে।
গম্বুজঃ মসজিদটির নামেই এর বৈশিষ্ট্য বহন করে। এত অধিক পরিমাণ গম্বুজ বাংলাদেশের আর কোন মসজিদে নেই। এটি ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর গম্বুজের সংখ্যা আরো বেশি। এ মসজিদে ৭০টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলো ৬০টি থামের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই অনেকে একে ৬০ গম্বুজ মসজিদ বলে থাকেন। এছাড়া তখন ফার্সি ভাষা প্রচলিত ছিল,ফার্সি ভাষায় স্তম্ভ^ বা খুঁটিকে গম্বুজ বলা হয় । তাই এটি ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত।
ছাদের দিকে তাকালে লক্ষ্য করবেন-এর গম্বুজের সংখ্যা সত্তর। এছাড়া রয়েছে ৭টি চৌচালা ছাউনি গম্বুজ। এছাড়া চার কোণে চারটি মিনারেরউপর একটি করে আধা গোলাকার অণুগম্বুজ রয়েছে। অধিকাংশ থাম পলকাটা এবং একটি মাত্র পাথর খন্ড দিয়ে তৈরি। আবার কোন কোন থাম একাধিক পাথরখন্ড দিয়ে তৈরি। তিনটি থামের পাথরখন্ডের উপর ইটের আস্তরের অস্তিÍত্ব লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের গৃহ নির্মাাণ শৈলির প্রাচীন রীতির অনুকৃতি হিসেবে ব্যবহৃত এই চৌচালা বিশিষ্ট গম্বুজ পরবর্তীকালে ছোট সোনা মসজিদ, দরসবাড়ি মসজিদেও লক্ষ করা যায়  ।
মিনারঃ মিনার যে কোন মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক। প্রাচীনকালের অধিকাংশ মসজিদে উঁচু মিনার লক্ষ্য করা যায়। ষাট গম্বুজ মসজিদেও মিনার রয়েছে।এ মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম চার কোণায় ৪টি মিনার লক্ষ্য করবেন। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণেরটির নাম ”তেলনাইকাঠি”খুঁটি। এ মিনারের উপরে উঠার সিঁিড়ি আছে। কেন্দ্রীয় দরজা ও কেন্দ্রীয় মেহরাবের মধ্যবতী স্তম্ভ/পিলারগুলোকে উত্তর-দক্ষিণে পারস্পরিক দূরত্ব ১৬ ইঞ্চি৬ ফুট।তৃতীয় সারির২টি ,অষ্টম সারির ২টি একাদশ সারির ১টি স্তম্ভের/ পিলারকে পাথর চারদিকে ইট দ্বারা আবৃত স্তম্ভবা পিলারগুলো ১১ ফুট উঁচু। মোট ৫টি স্তম্ভের  পিলার পাথরের  দ্বারা আবৃত ও ইটের উপরে  স্থানে স্থানে লাইম পানিং এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বাকী ৫৪টি পিলরে এরকম ব্যবস্থা ছিল বলে অনুমান করা হয়।

খিলানঃ এ মসজিদের সামনের দিকে মধ্যভাগে একটি বড় খিলান এবং এর দুপাশে ৫টি করে ছোট ১০টি খিলান আছে। মসজিদের সালাতকোঠার উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে আনুমানিক ২ মিটার উচ্চতায় এক সারি করে খিলান  কুলঙ্গির অ¯িতত্ব রয়েছে। সবকটি খিলানই দুইকেন্দ্রিক ও কৌণিক। কেন্দ্রিয় খিলান পথের উপরের কার্নিসে অপূর্ব একটি ত্রিভুজাকার পেডিমেন্ট রয়েছে। খিলানে-খিলানে রয়েছে টেরাকোটা। এগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোট গোলাপ,  পদ্মফুল,  তাল গাছ ও চারপত্র নকশা। 

খিলান দরজাঃ মসজিদটির উত্তরের মিম্বও ও মিম্বরের পাশে মসজিদে প্রবেশের জন্য এটি অপ্রশস্ত খিলান দরজা রয়েছে । এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রতিটিতে প্রতি আইলের জন্য একটি এবং পূর্ব দেয়ালের প্রতি ব্যা এর জন্য একটি করে খিলান দরজা রয়েছে। প্রতিটি দেয়ালের মাঝের খিলান -দরজাটি সংশ্লিষ্ট দেয়ালের অন্যান্য খিলান দরজাগুলোর চেয়ে আকারে বড়।

দরজাঃ মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি দরজা আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে ১৪টি দরজা। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় দরজাটি প্রায় ৯ ফুট ৭ ইঞ্চি চওড়া। মোট দরজার সংখ্যা ২৬টি। মসজিদটির পূর্ব দিকে একটি বড় ফটক ছিল। ফটকের দুপাশে ছিল আলাদা দুটি কক্ষ। এখন প্রধান ফটকটি ছাড়া দেয়ালে বা ছোট কক্ষের কোন অস্তিÍত্ব নেই। প্রতœতত্ত বিভাগ ১৫/১৬ বছর আগে প্রবেশ তোরণটি সংস্কার করে। তবে প্রবেশ তোরণের কক্ষ দুটি সংস্কার করা হয়নি। মসজিদের সামনে সবুজ লন ও ফুলের বাগান দেখতে পাবেন। মসজিদের উত্তর পাশেও ছিল একটি প্রবেশ পথ। তবে এখন আর সেটির অস্তিত্ত নেই।

প্রাচীরঃ মসজিদটির সুরক্ষিত অবয়ব দেখলে মনে হয় যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ও মসজিদটির ভুমিকা ছিল। সুউচ্চ মিনারে উঠলে দূর -দূরান্তের দৃশ্যাবলী সহজে দেখা যেত। এটি আগে প্রাচীরে ঘেরা ছিল।  প্রহরীরা সব সময় পাহারায় রত ছিল।

আজানঃ মসজিদের মিনারগুলো আজান দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়। এ মসজিদে রয়েছে চারটি মিনার। মিনারের উপরকার ”আন্ধার কোঠা” ও ”রওশন কোঠা ”নামের কক্ষ থেকে আজান দেয়া হতো।

নির্মাণ তথ্যঃ বর্তমানে এ মসজিদে কোন শিলালিপি নেই। তাই এটি কে কবে নির্মাণ করেছিলেন তা স্পষ্ট করে বলা যায়না। তবে ধারণা করা হচ্ছে ১৪৫৯ খৃষ্টাব্দের কিছু পূর্বে খানম আজম উলুগ খান জাহান নামক এক মহাপুরুষ এই বিখ্যাত মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি প্রার্থনা কক্ষের চৌচালা ছাদ ও গম্বুঝ গুলো ইট ও বড় বড় পাথরের খাম্বার দ্বারা সমর্থিত খিলানের উপর নির্মিত। কথিত আছে ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর খান জাহান আলী অলৌকিক ক্ষমতা বলে ভারতের রাজমহল থেকে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন।এই ইমারতটির গঠনশৈলিতে তুগলকি স্থাপত্যের নিদর্শন রক্ষনীয়। ইটের তৈরি চুন সুরকির গাঁথুনিতে বিরাট দেয়াল ,পোড়া মাটির ফলকে নক্সা করা হয়েছে। এ মসজিদের পূর্ব পাশের লহড়াযুক্ত ঈষৎ বাঁকা আসিার মাঝখানে গ্রিক ঐতিহ্যেে অনূকরণে একটি ত্রিকোণাকাকার রেডিমেন্ট রূপ চিহ্ণ রয়েছে।ুনির্মান কাজে কাঁদার মসলার সঙ্গে গড়ে ২১ সেন্টিমিটার *২২ সেন্টি মিটার পরিমাপের ইট ও দেয়ালের গায়ে চুনের প্রলেপ ব্যবহৃত  হয়েছে। অলংকরণগূলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার লতাপাতার চিত্র পরিলক্ষিত হয়।

মেহরাব ঃপশ্চিম দেয়ালে ১০টি মেহরাব আছে। মেহরাব শব্দের অর্থ রাখার স্থাান । তার সৈন্য , মুরিদ,  সাথী ও ভক্তগন নামাজ, ওয়াজ ও বিচারের সময় অস্ত্র ও সামান মেহরাবে রেখে দিতেন। যদি কোন বিপদ সংকেত পাওয়া যেত তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সৈনিকগণ অস্ত্র হাতে মেহরাব বরাবর পূর্ব দিকের ১০ টি দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারত। একারেণে ১০টি মেহরাব বরাবর পূর্ব দিকে ১০টি দরজা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবের উত্তরে একটি ভিআইপি দরজা রয়েছে। এটি দিয়ে খানজ্হাান আলী আসা যাওয়া করতেন। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি পাথরের তৈরি এবং পদ্মফুল ও লতাপাতার অলংকরণ করা হয়েছে। মসজিদটির সালাতকোঠার কিবলা দেয়ালের মাঝের ব্যা এর উত্তর দিকের একটি ব্যা ব্যাতিত প্রতিটি ব্যা এর জন্য একটি করে অবতল মিহরাব আছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি আকারে সবচেয়ে বড় এবং পাথর দিয়ে তৈরি।  
এমসজিদের মিহরাবগূলোর অলংকরণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। কেন্দ্রীয় মিহরাবের খিলানের মুখে বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় রূপান্বিত খাঁজ রয়েছে। কিবলা দেয়ালের দরজার উত্তরে অবস্থিত দুটি মিহরাবের উপর জ্যামেতিক ফুলেল নকশার একটি সারি ও তৃতীয়টির মুখে রূপান্বিত খাঁজ নকশা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব সংলগ্ন দক্ষিণের মিহরাবের উপর পাঁচটি ফুলের ্একটি সারি এবং পরবর্তী দুটির প্রতিটির উপর একটি করে ফুলের কারুকাজ রয়েছে। অবতল মিহরাবগূলোর মাঝের অংশে ফুল শিকল ঝুলন্ত রূপচিহ্ণ স্থান লাভ করেছে। মিহরাবগুলো ১.১৮মি. গভীর ,১.৩৬ মি.প্রশস্ত এবং ১.৪৫ মিটার উঁচু। প্রত্যোকটি মিহরাবই একটি প্রান্ত বন্ধণীতে আবদ্ধ। তাছাড়া নকশার ক্ষেত্রে এদের মাঝে আরো কিছু স্বাতন্ত্র বজায় রয়েছে। কারুকাজে ব্যবহৃত রূপচিহ্ণগুলোর মধ্যে জালি অন্যতম। এটি একাধারে মসজিদ , ঈদগাহ, দরবারগৃহ, মাদ্রাসা, হোজরাখানা, খানকা শরীফ, মোসাফিরখানা, লঙ্গরখানা, সরাইখানাও সৈনিকদের দুর্গও বিচারালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে জানা যায়।

শাসনকালঃ এখানে এসে জানবেন-খানজাহান আলী (১৩৬৯-১৪৫৯)একজন নামকরা সাধক ও ইসলাম প্রচারক ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালবেসে হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তাই জনগন তাকে বলত ”উলুগ খান-ইজাহান (পৃথিবীর মহান খান) এ নামেই সবাই তাকে চিনত। তাই তার  প্রকৃত নামটি আজ হারিয়ে গেছে। খুলনা ও যশোর এলাকার শাসনকার্য তিনি পরিচালনা করতেন। তবে তিনি স্বাধীন রাজা ছিলেননা। গৌড়ের স্বাধীন সুলতান জালাল উদ্দীন (১৪১৮-১৪৩২) সুলতান নাসির উদ্দীন মাহমুদশাহসহ(১৪৩৬-১৪৬০) ৪ জন সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তিনি তার শাসন এলাকার নাম দিয়েছিলেন ”খলিফাতাবাদ” বা প্রতিনিধির আবাসস্থল।
যতদূর জানা যায় ১৩৮৯ খৃষ্টাব্দে তুগলক সেনাবাহিনীতে তিনি  যোগ দিয়েছিলেন।পরবর্তীতে সেনাপতি পদে উন্নিত হন। ১৩৯৪ সালে জৈনপুর প্রদেশের গভর্ণর পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২ লক্ষ ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে বাংলা আক্রমণ করলে রাজা গণেশ দিনাজপুর পালিয়ে যান।

সাদৃশ্যঃ পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ ও গৌড়ের সোনা মসজিদ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় এত বড় মসজিদ আর ছিল না। এটি অবিভক্ত বাংলার তৃতীয় বৃহত্তম এবং বতমান বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন মসজিদ।
মাজারঃষাট গম্বুজ মসজিদ দেখবেন অথচ খানজাহান অলীূও মাজাওে সালাম বিনিময় না কওে চলে যাবেন তা কি হয়?মসজিদ থেকে ৩কিলোমিটার দক্ষিণ –পূর্বে রণবিজয়পুর গ্রামে।এখানেই খানজাহান আলীর মাজার অবস্থিত।ভ্যান বা রিক্সায় চেপে ১৫ মিনিটে পৌঁছতে পারবেন।*******************৮
এখানে এসে খান জাহান সম্পর্কে আরো জœবেন-তার চরিত্রে বহু গূণের সমন্বয় ঘটেছিল।রাজ্য শাসন ছিল তার দায়িত্ব,ইসলাম প্রচার ছিল তার কর্তব্য,সুফি সাধনা ছিল তার আধ্যাত্ম,প্রজা কল্যাণ ছিল তার লক্ষ্য এবং শিল্প সমৃদ্ধ সাথাপনা ছিল তার আনন্দ।
এই সমাধিসৌধটি এক গম্বুজবিশিষ্ট একটি বিল্ডিং। এটি সমাধিসৌধটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং।এটি বর্গাকার এবং মধ্যভাগে ৩ ধাপবিশিষ্ট কালো পাথর দ্বারা নির্মিত।মাজারের মেঝটি সাদা নীল এবং বাদামী রং এর টালি দ্বারা অলংকৃত।৩টি খিলান বিশিষ্ট প্রবেশ পথ রয়েছে।এই সমাধিতে খানজাহান আলী (রহঃ)এর মৃত্যুর তারিখ ২ শে জিলহজ্ব ৮৬৩(২ শে অক্টোবর ১৪৫৯)লিখা আছে।প্রতি বছর ২৪ও২৫ অগ্রহায়ন এখানে পবিত্র ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।
দিঘিঃ মাজারের দক্ষিণ দিকে চোখ ফেরালেই দেখতে পাবেন একটি বিশাল দিঘি। এটি” খাঞ্জেলা ঠাকুর দিঘি ”নামে পরিচিত। তিনি এ ধরণের ৩৬০টি দিঘি খনন করেছিলেন বলে জানা যায়। এখানে কতগুলো কুমির দেখতে পাবেন। এগুলো ”কালো পাহাড়”ও ”ধলাপাহাড় ”নামে পরিচিত। অনুমতি নিয়ে এগুলোকে মানত খাইয়ে আপনার মনের আশা পূরণ করতে পারেন। এখানে আপনি গোসল করে পবিত্রতা অর্জণ করতে পারেন। পুরুষ ও মহিলাদের  জন্য আলাদা ঘাট রয়েছে। দিঘিটি উত্তর-দক্ষিণে ২ হাজার ফুট লম্বা এবং পূর্ব পশ্চিমে প্রায় ১৮০০ ফুট চওড়া।

জাদুঘরঃ বাংলাদেশ প্রতœতত্ত অধিদপ্তরের তত্তাবধানে ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ –পূর্ব দিকে মহাসড়কের পাশে নির্মিত রয়েছে প্রতœতত্ত জাদুঘর। এখানে খানজাহান আলীর শাসনামলের কিছু সরঞ্জাম দেখবেন।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকার গাবতলী অথবা কল্যাণপুর থেকে খুলনা-বাগেরেহাট যেতে পারবেন। সাধারণ কোচের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২৫০/৩০০ টাকা। চেয়ারকোচ ৪০০ টাকা।সময় লাগবে ৭/৮ ঘন্টা। হানিফ, সোহাগ, কিংবা কেয়ার বাসেও যেতে পারেন।

যেখানে থাকবেনঃ ইচ্ছে করলে জাদুঘরের উত্তর দিকে অবস্থিত বিশ্রামাগারে থাকতে পারেন। অগ্রিম বুকিং এর জন্য খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর (শীব বাড়ি মোড়)হতে বুকিং নিতে হবে। দরগার ফকিররা সামাণ্য দক্ষিণার বিনিময়ে সাধারণ ভক্তদের তাদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন। আর খুলনায় থাকতে চাইলে রয়েল ইন্টারন্যাশনাল, আলফেশান, কিংবা গোল্ডেন কিং স্টার
হোটেলেও রাত কাটাতে পারেন। 

Post a Comment

0 Comments

0

বিশ্ব ঐতিহ্য- বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
বাংলাদেশে যে কটি বিশ্ব ঐতিহ্য রয়েছে সেগুলোর মধ্যে বাগেরহাটের ষাট গম্বুজ মসজিদ অন্যতম। এটি ইউনেস্কা কতৃক বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ১৯৮৩ সালে চিহ্ণিত হয়েছে। এটি মুসলমানদের ধর্মীয় উপাসনালয় হলেও সকল ধর্মের লোক ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি পরিদর্শনে অনায়াসে যেতে পারেন। আপনিও যে কোন অবসরে গিয়ে বাংলাদেশের প্রাচীন মসজিদগুলোর মধ্যে বৃহত্তম এ মসজিদটি দেখে আসতে পারেন।

অবস্থানঃ খুলনা শহর থেকে ২২ কিলোমিটার দক্ষিণ পূর্বে এবং বাগেরহাট জেলা শহর থেকে ৬ কিলোমিটার পশ্চিমে বাগেরহাট খুলনা মহাসড়কের পাশেই মসজিদটি অবস্থিত।

আয়তনঃ অতীতের অনেক পুরাতন মসজিদ হলেও মসজিদটি বেশ বড়। আগেকার মসজিদগুলোর আয়তন সাধারণত এত বড় হতোনা। মুসলিম জনসংখ্যা কম হওয়ায় মসজিদগুলোতে ২/৩ কাতারের বেশি লোক হতোনা। ষাট গম্বুজ মসজিদটি কেন্দ্রীয় মসজিদ হিসেবে বড় আকারে তৈরি করা হয়েছিল। কারণ এটি শুধু নামাজ আদায়ের জন্যই ব্যবহৃত হতোনা। এতে সালিস, সভা ও সৈনিক সমাবেশ ঘটানো হতো।  একে  খানজাহান আলীর মন্ত্রণালয় বলেও কেউ কেউ অভিহিত করেছেন।
মসজিদটির বাইরের দিকের আয়তন, উত্তর-দক্ষিণে ১৬০ ফুট এবং পুর্ব পশ্চিমে ১০৪ ফুট। এছাড়া ভেতরের দিকের আয়তন ১৪৩*৮৮ফুট এবং উচ্চতা ২২ ফুট।

দেয়ালঃ মসজিদের দেয়ালগুলো বেশ মজবুত। মসজিদটির দেয়ালের পুরুত্ব ৮ফুট। এত বেশি পুরত্বের দেয়াল সম্ভবত কোন মসজিদে নেই।
ছাঁদঃ জুতা খুলে মসজিদের ভেতরে প্রবেশ করুন। খেয়াল করে দেখুন এটি ৭টি আইল ও ১১টি ব্যাতে বিভক্ত। এগুলোর প্রতিটি অংশ চৌচালা আকৃতির ভোল্টে আচ্ছাদিত। বাংলায় এই চৌচালা আঙ্গিকের ব্যবহার এখানেই প্রথম দেখা যায়। পূর্ব দেয়ালের প্রশস্ততম কেন্দ্রীয় প্রবেশ পথ এবং পশ্চিম দেয়ালের প্রশস্ততম কেন্দ্রীয় মেহরাবের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারি ”বে” মসজিদটিকে উত্তর ও দক্ষিণে বিস্তৃত  দুটি সমান অংশে বিভক্ত করেছে।
গম্বুজঃ মসজিদটির নামেই এর বৈশিষ্ট্য বহন করে। এত অধিক পরিমাণ গম্বুজ বাংলাদেশের আর কোন মসজিদে নেই। এটি ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত হলেও প্রকৃতপক্ষে এর গম্বুজের সংখ্যা আরো বেশি। এ মসজিদে ৭০টি গোলাকার গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলো ৬০টি থামের উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই অনেকে একে ৬০ গম্বুজ মসজিদ বলে থাকেন। এছাড়া তখন ফার্সি ভাষা প্রচলিত ছিল,ফার্সি ভাষায় স্তম্ভ^ বা খুঁটিকে গম্বুজ বলা হয় । তাই এটি ষাট গম্বুজ মসজিদ নামে পরিচিত।
ছাদের দিকে তাকালে লক্ষ্য করবেন-এর গম্বুজের সংখ্যা সত্তর। এছাড়া রয়েছে ৭টি চৌচালা ছাউনি গম্বুজ। এছাড়া চার কোণে চারটি মিনারেরউপর একটি করে আধা গোলাকার অণুগম্বুজ রয়েছে। অধিকাংশ থাম পলকাটা এবং একটি মাত্র পাথর খন্ড দিয়ে তৈরি। আবার কোন কোন থাম একাধিক পাথরখন্ড দিয়ে তৈরি। তিনটি থামের পাথরখন্ডের উপর ইটের আস্তরের অস্তিÍত্ব লক্ষ করা যায়। বাংলাদেশের গৃহ নির্মাাণ শৈলির প্রাচীন রীতির অনুকৃতি হিসেবে ব্যবহৃত এই চৌচালা বিশিষ্ট গম্বুজ পরবর্তীকালে ছোট সোনা মসজিদ, দরসবাড়ি মসজিদেও লক্ষ করা যায়  ।
মিনারঃ মিনার যে কোন মসজিদের সৌন্দর্য বর্ধনে সহায়ক। প্রাচীনকালের অধিকাংশ মসজিদে উঁচু মিনার লক্ষ্য করা যায়। ষাট গম্বুজ মসজিদেও মিনার রয়েছে।এ মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম চার কোণায় ৪টি মিনার লক্ষ্য করবেন। এগুলোর মধ্যে দক্ষিণেরটির নাম ”তেলনাইকাঠি”খুঁটি। এ মিনারের উপরে উঠার সিঁিড়ি আছে। কেন্দ্রীয় দরজা ও কেন্দ্রীয় মেহরাবের মধ্যবতী স্তম্ভ/পিলারগুলোকে উত্তর-দক্ষিণে পারস্পরিক দূরত্ব ১৬ ইঞ্চি৬ ফুট।তৃতীয় সারির২টি ,অষ্টম সারির ২টি একাদশ সারির ১টি স্তম্ভের/ পিলারকে পাথর চারদিকে ইট দ্বারা আবৃত স্তম্ভবা পিলারগুলো ১১ ফুট উঁচু। মোট ৫টি স্তম্ভের  পিলার পাথরের  দ্বারা আবৃত ও ইটের উপরে  স্থানে স্থানে লাইম পানিং এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। বাকী ৫৪টি পিলরে এরকম ব্যবস্থা ছিল বলে অনুমান করা হয়।

খিলানঃ এ মসজিদের সামনের দিকে মধ্যভাগে একটি বড় খিলান এবং এর দুপাশে ৫টি করে ছোট ১০টি খিলান আছে। মসজিদের সালাতকোঠার উত্তর ও দক্ষিণের দেয়ালে আনুমানিক ২ মিটার উচ্চতায় এক সারি করে খিলান  কুলঙ্গির অ¯িতত্ব রয়েছে। সবকটি খিলানই দুইকেন্দ্রিক ও কৌণিক। কেন্দ্রিয় খিলান পথের উপরের কার্নিসে অপূর্ব একটি ত্রিভুজাকার পেডিমেন্ট রয়েছে। খিলানে-খিলানে রয়েছে টেরাকোটা। এগুলোতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছোট গোলাপ,  পদ্মফুল,  তাল গাছ ও চারপত্র নকশা। 

খিলান দরজাঃ মসজিদটির উত্তরের মিম্বও ও মিম্বরের পাশে মসজিদে প্রবেশের জন্য এটি অপ্রশস্ত খিলান দরজা রয়েছে । এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের প্রতিটিতে প্রতি আইলের জন্য একটি এবং পূর্ব দেয়ালের প্রতি ব্যা এর জন্য একটি করে খিলান দরজা রয়েছে। প্রতিটি দেয়ালের মাঝের খিলান -দরজাটি সংশ্লিষ্ট দেয়ালের অন্যান্য খিলান দরজাগুলোর চেয়ে আকারে বড়।

দরজাঃ মসজিদটির পূর্ব দেয়ালে ১১টি দরজা আছে। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালে আছে ৭টি করে ১৪টি দরজা। পূর্ব দেয়ালের কেন্দ্রীয় দরজাটি প্রায় ৯ ফুট ৭ ইঞ্চি চওড়া। মোট দরজার সংখ্যা ২৬টি। মসজিদটির পূর্ব দিকে একটি বড় ফটক ছিল। ফটকের দুপাশে ছিল আলাদা দুটি কক্ষ। এখন প্রধান ফটকটি ছাড়া দেয়ালে বা ছোট কক্ষের কোন অস্তিÍত্ব নেই। প্রতœতত্ত বিভাগ ১৫/১৬ বছর আগে প্রবেশ তোরণটি সংস্কার করে। তবে প্রবেশ তোরণের কক্ষ দুটি সংস্কার করা হয়নি। মসজিদের সামনে সবুজ লন ও ফুলের বাগান দেখতে পাবেন। মসজিদের উত্তর পাশেও ছিল একটি প্রবেশ পথ। তবে এখন আর সেটির অস্তিত্ত নেই।

প্রাচীরঃ মসজিদটির সুরক্ষিত অবয়ব দেখলে মনে হয় যে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে ও মসজিদটির ভুমিকা ছিল। সুউচ্চ মিনারে উঠলে দূর -দূরান্তের দৃশ্যাবলী সহজে দেখা যেত। এটি আগে প্রাচীরে ঘেরা ছিল।  প্রহরীরা সব সময় পাহারায় রত ছিল।

আজানঃ মসজিদের মিনারগুলো আজান দেয়ার জন্য তৈরি করা হয়। এ মসজিদে রয়েছে চারটি মিনার। মিনারের উপরকার ”আন্ধার কোঠা” ও ”রওশন কোঠা ”নামের কক্ষ থেকে আজান দেয়া হতো।

নির্মাণ তথ্যঃ বর্তমানে এ মসজিদে কোন শিলালিপি নেই। তাই এটি কে কবে নির্মাণ করেছিলেন তা স্পষ্ট করে বলা যায়না। তবে ধারণা করা হচ্ছে ১৪৫৯ খৃষ্টাব্দের কিছু পূর্বে খানম আজম উলুগ খান জাহান নামক এক মহাপুরুষ এই বিখ্যাত মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। মসজিদটি প্রার্থনা কক্ষের চৌচালা ছাদ ও গম্বুঝ গুলো ইট ও বড় বড় পাথরের খাম্বার দ্বারা সমর্থিত খিলানের উপর নির্মিত। কথিত আছে ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর খান জাহান আলী অলৌকিক ক্ষমতা বলে ভারতের রাজমহল থেকে জলপথে ভাসিয়ে এনেছিলেন।এই ইমারতটির গঠনশৈলিতে তুগলকি স্থাপত্যের নিদর্শন রক্ষনীয়। ইটের তৈরি চুন সুরকির গাঁথুনিতে বিরাট দেয়াল ,পোড়া মাটির ফলকে নক্সা করা হয়েছে। এ মসজিদের পূর্ব পাশের লহড়াযুক্ত ঈষৎ বাঁকা আসিার মাঝখানে গ্রিক ঐতিহ্যেে অনূকরণে একটি ত্রিকোণাকাকার রেডিমেন্ট রূপ চিহ্ণ রয়েছে।ুনির্মান কাজে কাঁদার মসলার সঙ্গে গড়ে ২১ সেন্টিমিটার *২২ সেন্টি মিটার পরিমাপের ইট ও দেয়ালের গায়ে চুনের প্রলেপ ব্যবহৃত  হয়েছে। অলংকরণগূলোর মধ্যে বিভিন্ন প্রকার লতাপাতার চিত্র পরিলক্ষিত হয়।

মেহরাব ঃপশ্চিম দেয়ালে ১০টি মেহরাব আছে। মেহরাব শব্দের অর্থ রাখার স্থাান । তার সৈন্য , মুরিদ,  সাথী ও ভক্তগন নামাজ, ওয়াজ ও বিচারের সময় অস্ত্র ও সামান মেহরাবে রেখে দিতেন। যদি কোন বিপদ সংকেত পাওয়া যেত তাহলে সঙ্গে সঙ্গে সৈনিকগণ অস্ত্র হাতে মেহরাব বরাবর পূর্ব দিকের ১০ টি দরজা দিয়ে বের হয়ে যেতে পারত। একারেণে ১০টি মেহরাব বরাবর পূর্ব দিকে ১০টি দরজা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মেহরাবের উত্তরে একটি ভিআইপি দরজা রয়েছে। এটি দিয়ে খানজ্হাান আলী আসা যাওয়া করতেন। কেন্দ্রীয় মেহরাবটি পাথরের তৈরি এবং পদ্মফুল ও লতাপাতার অলংকরণ করা হয়েছে। মসজিদটির সালাতকোঠার কিবলা দেয়ালের মাঝের ব্যা এর উত্তর দিকের একটি ব্যা ব্যাতিত প্রতিটি ব্যা এর জন্য একটি করে অবতল মিহরাব আছে। কেন্দ্রীয় মিহরাবটি আকারে সবচেয়ে বড় এবং পাথর দিয়ে তৈরি।  
এমসজিদের মিহরাবগূলোর অলংকরণের ক্ষেত্রে একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায়। কেন্দ্রীয় মিহরাবের খিলানের মুখে বিশেষ বৈশিষ্ট্যময় রূপান্বিত খাঁজ রয়েছে। কিবলা দেয়ালের দরজার উত্তরে অবস্থিত দুটি মিহরাবের উপর জ্যামেতিক ফুলেল নকশার একটি সারি ও তৃতীয়টির মুখে রূপান্বিত খাঁজ নকশা রয়েছে। কেন্দ্রীয় মিহরাব সংলগ্ন দক্ষিণের মিহরাবের উপর পাঁচটি ফুলের ্একটি সারি এবং পরবর্তী দুটির প্রতিটির উপর একটি করে ফুলের কারুকাজ রয়েছে। অবতল মিহরাবগূলোর মাঝের অংশে ফুল শিকল ঝুলন্ত রূপচিহ্ণ স্থান লাভ করেছে। মিহরাবগুলো ১.১৮মি. গভীর ,১.৩৬ মি.প্রশস্ত এবং ১.৪৫ মিটার উঁচু। প্রত্যোকটি মিহরাবই একটি প্রান্ত বন্ধণীতে আবদ্ধ। তাছাড়া নকশার ক্ষেত্রে এদের মাঝে আরো কিছু স্বাতন্ত্র বজায় রয়েছে। কারুকাজে ব্যবহৃত রূপচিহ্ণগুলোর মধ্যে জালি অন্যতম। এটি একাধারে মসজিদ , ঈদগাহ, দরবারগৃহ, মাদ্রাসা, হোজরাখানা, খানকা শরীফ, মোসাফিরখানা, লঙ্গরখানা, সরাইখানাও সৈনিকদের দুর্গও বিচারালয় হিসেবে ব্যবহৃত হতো বলে জানা যায়।

শাসনকালঃ এখানে এসে জানবেন-খানজাহান আলী (১৩৬৯-১৪৫৯)একজন নামকরা সাধক ও ইসলাম প্রচারক ছিলেন। তিনি মানুষকে ভালবেসে হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিলেন। তাই জনগন তাকে বলত ”উলুগ খান-ইজাহান (পৃথিবীর মহান খান) এ নামেই সবাই তাকে চিনত। তাই তার  প্রকৃত নামটি আজ হারিয়ে গেছে। খুলনা ও যশোর এলাকার শাসনকার্য তিনি পরিচালনা করতেন। তবে তিনি স্বাধীন রাজা ছিলেননা। গৌড়ের স্বাধীন সুলতান জালাল উদ্দীন (১৪১৮-১৪৩২) সুলতান নাসির উদ্দীন মাহমুদশাহসহ(১৪৩৬-১৪৬০) ৪ জন সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। তিনি তার শাসন এলাকার নাম দিয়েছিলেন ”খলিফাতাবাদ” বা প্রতিনিধির আবাসস্থল।
যতদূর জানা যায় ১৩৮৯ খৃষ্টাব্দে তুগলক সেনাবাহিনীতে তিনি  যোগ দিয়েছিলেন।পরবর্তীতে সেনাপতি পদে উন্নিত হন। ১৩৯৪ সালে জৈনপুর প্রদেশের গভর্ণর পদে যোগ দেন। পরবর্তীতে ২ লক্ষ ৬০ হাজার সৈন্য নিয়ে বাংলা আক্রমণ করলে রাজা গণেশ দিনাজপুর পালিয়ে যান।

সাদৃশ্যঃ পান্ডুয়ার আদিনা মসজিদ ও গৌড়ের সোনা মসজিদ ছাড়া অবিভক্ত বাংলায় এত বড় মসজিদ আর ছিল না। এটি অবিভক্ত বাংলার তৃতীয় বৃহত্তম এবং বতমান বাংলাদেশের বৃহত্তম প্রাচীন মসজিদ।
মাজারঃষাট গম্বুজ মসজিদ দেখবেন অথচ খানজাহান অলীূও মাজাওে সালাম বিনিময় না কওে চলে যাবেন তা কি হয়?মসজিদ থেকে ৩কিলোমিটার দক্ষিণ –পূর্বে রণবিজয়পুর গ্রামে।এখানেই খানজাহান আলীর মাজার অবস্থিত।ভ্যান বা রিক্সায় চেপে ১৫ মিনিটে পৌঁছতে পারবেন।*******************৮
এখানে এসে খান জাহান সম্পর্কে আরো জœবেন-তার চরিত্রে বহু গূণের সমন্বয় ঘটেছিল।রাজ্য শাসন ছিল তার দায়িত্ব,ইসলাম প্রচার ছিল তার কর্তব্য,সুফি সাধনা ছিল তার আধ্যাত্ম,প্রজা কল্যাণ ছিল তার লক্ষ্য এবং শিল্প সমৃদ্ধ সাথাপনা ছিল তার আনন্দ।
এই সমাধিসৌধটি এক গম্বুজবিশিষ্ট একটি বিল্ডিং। এটি সমাধিসৌধটি এক গম্বুজ বিশিষ্ট একটি বিল্ডিং।এটি বর্গাকার এবং মধ্যভাগে ৩ ধাপবিশিষ্ট কালো পাথর দ্বারা নির্মিত।মাজারের মেঝটি সাদা নীল এবং বাদামী রং এর টালি দ্বারা অলংকৃত।৩টি খিলান বিশিষ্ট প্রবেশ পথ রয়েছে।এই সমাধিতে খানজাহান আলী (রহঃ)এর মৃত্যুর তারিখ ২ শে জিলহজ্ব ৮৬৩(২ শে অক্টোবর ১৪৫৯)লিখা আছে।প্রতি বছর ২৪ও২৫ অগ্রহায়ন এখানে পবিত্র ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়।
দিঘিঃ মাজারের দক্ষিণ দিকে চোখ ফেরালেই দেখতে পাবেন একটি বিশাল দিঘি। এটি” খাঞ্জেলা ঠাকুর দিঘি ”নামে পরিচিত। তিনি এ ধরণের ৩৬০টি দিঘি খনন করেছিলেন বলে জানা যায়। এখানে কতগুলো কুমির দেখতে পাবেন। এগুলো ”কালো পাহাড়”ও ”ধলাপাহাড় ”নামে পরিচিত। অনুমতি নিয়ে এগুলোকে মানত খাইয়ে আপনার মনের আশা পূরণ করতে পারেন। এখানে আপনি গোসল করে পবিত্রতা অর্জণ করতে পারেন। পুরুষ ও মহিলাদের  জন্য আলাদা ঘাট রয়েছে। দিঘিটি উত্তর-দক্ষিণে ২ হাজার ফুট লম্বা এবং পূর্ব পশ্চিমে প্রায় ১৮০০ ফুট চওড়া।

জাদুঘরঃ বাংলাদেশ প্রতœতত্ত অধিদপ্তরের তত্তাবধানে ষাট গম্বুজ মসজিদের দক্ষিণ –পূর্ব দিকে মহাসড়কের পাশে নির্মিত রয়েছে প্রতœতত্ত জাদুঘর। এখানে খানজাহান আলীর শাসনামলের কিছু সরঞ্জাম দেখবেন।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকার গাবতলী অথবা কল্যাণপুর থেকে খুলনা-বাগেরেহাট যেতে পারবেন। সাধারণ কোচের ভাড়া যাত্রীপ্রতি ২৫০/৩০০ টাকা। চেয়ারকোচ ৪০০ টাকা।সময় লাগবে ৭/৮ ঘন্টা। হানিফ, সোহাগ, কিংবা কেয়ার বাসেও যেতে পারেন।

যেখানে থাকবেনঃ ইচ্ছে করলে জাদুঘরের উত্তর দিকে অবস্থিত বিশ্রামাগারে থাকতে পারেন। অগ্রিম বুকিং এর জন্য খুলনা বিভাগীয় জাদুঘর (শীব বাড়ি মোড়)হতে বুকিং নিতে হবে। দরগার ফকিররা সামাণ্য দক্ষিণার বিনিময়ে সাধারণ ভক্তদের তাদের বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেন। আর খুলনায় থাকতে চাইলে রয়েল ইন্টারন্যাশনাল, আলফেশান, কিংবা গোল্ডেন কিং স্টার
হোটেলেও রাত কাটাতে পারেন। 

Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.