বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণে পর্যটন

বাংলাদেশের  বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণে পর্যটন
মমিনুল ইসলাম মোল্লা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন সকলকে ভোট প্রদানের আহবান জানিয়েছেন। তিনি এব্যাপারে অন্যান্য দেশেরও সহায়তা চেয়েছেন। সুন্দরবনকে ভোট দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের সবচেয়ে দর্শনীয় স্পটগুলো হচ্ছে ঃ করমজল , হারবারিয়া , জোংড়া , কটকা , কচিখালি , নীলকমল , হিরণপয়েন্ট , ও দুবলারচর। তথ্য এং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেছেন-প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনে সুন্দরবন বিজয়ী হলে তা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জবল করবে এবং দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। পর্যটন  শুধুই বিনোদনই  নয় এটি শিক্ষা ও জ্ঞাণার্জণের মাধ্যম। পাঠ্য পুস্তকে একটি বিষয় শতবার পড়ে যা জানা যায় সে স্থান একবার দেখেই তা ভালভাবে অনুধাবন করা যায়। তাই উন্নত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-তুমি কি দেখনি আল্লাহ আকাশে  থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতপর তদ্ধারা আমি বিভিন্ন বর্ণের ফলমূল উদগত করি। পর্বতসমুহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ  , সাদা , লাল , ও নিকষ কালো  , । অনুরুপভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ , জন্তু , চতুষ্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞাণীরা  তাকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময় (সুরা ফাতির ২৭/২৮)। পর্যটনকে জ্ঞাণার্জণের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এব্যাপারে পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে -যে জ্ঞার্ণ্জণের জন্য ঘর থেকে পথে বের হবে সে যেন আল্লাহর পথে বের হলো।”  বিশিষ্ট পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন -ভ্রমণ ¯্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য জানায় । ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় । প্রতিটি মানুষ স্ব স্ব সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূওে ,  দেশে বা বিদেশে ভ্রমণ বা পর্যটনের মাধ্যমে ¯্রষ্টার বৈচিত্রময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে ***বিকশিত করা উচিত। পর্যটন একটি অর্থনৈতিক খাত। বিদেশি মুদ্রা অর্জণের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটনের মাধ্যমে অনেক এগিয়ে গেছে। কোন কোন দেশ এখাত থেকে তাদের জাতীয় আয়ের অর্ধেক অর্থ অর্জণ করে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প সম্ভাবনাময়। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটনোপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা হলে আমাদের দেশও পর্যটনশিল্পে বেশ এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপাল তাদের জাতীয় আয়ের ৪০ % অর্জণ করে পর্যটন খাত থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে  বড় পর্বত হিমালয় নেপালে অবস্থিত । মাউন্ট এভারেস্ট দেখা ও তাতে আরোহণের জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে বহু লোক নেপালে আসে। নেপালের পাশাপাশি ভারত ও পর্যটনশির্পে বেশ এগিয়ে আছে। পর্যটন এমনই এক শিল্প খাত যেখানে নতুন করে কোন কিছু সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয় না। প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণকে শুধু রুপান্তরের মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হলেই এই খাত থেকে অর্থ আয় করা সম্ভব। এক তথ্যে জানা যায় -২০০০ সালে মোট ৬২ কোটি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে। ২০১০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০ কোটি।***

বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো অপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। পরিকল্পনাহীন  কাজ কর্মের জন্য প্রাকৃতিক মনোরম স্থানগুলোও পর্যটকদের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।  বিদেশী পর্যটকদের জন্য উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য পর্যটনকেন্দ্রের  কাছাকাছি যায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এতে হীতে বিপরীত হচ্ছে। এব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শাহেদা রহমান জানান , অন্যান্য দেশে সাধারণত প্রতœস্থল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ত পর্যটন বিভাগের থাকেনা। এসব দেশে চেষ্টা করা হয় প্রতœস্থল এর চারপাশ যতটা সম্ভব উন্মুক্ত রাখার । ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার । এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত। এটি সপ্তাশ্চার্যের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এখানে বিদেশি পর্যটকদের আসা যাওয়া কমে গেছে। প্রয়োজনীয় ব্যসস্থাও স্বাচ্ছন্দের অভাব ও নিরাপত্তার অভাব এর জন্য দায়ী। এছাড়া সাগরের ঢেউ দেখা ***বাদে বিদেশিদের আকৃষ্ট করার মতো তেমন কোন স্পট এখানে গড়ে তোলা হয়নি। তাই বিদেশিরা কক্সবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। এছাড়া কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এটি বিদেশীরা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। এজন্যই বাংলাদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে গেলে প্রথম প্রথম জরিমানা দিতে হয়। কারণ রাস্তার পাশে কলার খোসা ফেলা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।কিন্তু কেউ কি চিন্তা করেছেন এই খোসায় আছাড় খেয়ে যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন। এজন্য সেদেশে গেলে জরিমানা গুণতে হয়। আর আমাদেদের দেশে? এটি কোন ব্যাপারই নয়। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গেলে দেখা যায়  কলার খোসা , পলিথিন , কাগজের টুকরা , খাবার প্যাকেট , বাদামের খোসা ,সহ বহু আবর্জনা যত্র তত্র পড়ে আছে। তাই নয় কোন কোন যায়গায় খোলামেলা  মলমূত্র ত্যাগের দৃশ্য ও চোখে পড়ে। যা দেখে বিদেশি পর্যটকগন মনক্ষুণ্ণ হন এবং আমাদের প্রতি তাদের ঘৃণা জন্মে।***বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন। প্রায় সময় আমরা পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই ছিনতাইকারীর কবলে বিদেশি পর্যটক। কোন বিদেশি পর্যটক আর্থিকভাবে ক্খতিগ্রস্ত হলে তারা দ্বিতিয়বার এদেশে আসবেন না । একথাটি চিন্তা করে সরকার কক্রবাজারে টুরিস্ট পুলিশ গঠন করছে। এব্যবস্থা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও করা হবে বলে জানা গেছে।শুধুমাত্র বিদেশি নয় দেশিয় পর্যটকগনও এসমস্যায় পড়েন। পর্যটকবাহী গাড়ীকে  আটকে দেয়া হয়। কিছু না দিলে রাস্তা বন্ধ করে রাখে এবং দুর্ব্যবহার করে। এজন্য কেউ মহিলা নিয়ে ঘুরতে চাননা। মহিলা নিয়ে গেলে তাদেও তৎপরতা যেন আরো বেড়ে যায়। তাই দেেশর সকল পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটন পুলিশের ব্যবস্থা করলে নারী পর্যটকদেও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশের পর্যটন সেক্টেওে পর্যটক সহযোগী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এনএইচটিটি আই টুরিজম সেক্টওে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান । এছাড়া পর্যটন কর্পোরেশনে হোটেল ***ও টুরিজম সংক্রান্ত ১১ টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।কিন্তু এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরো অধিক প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত বলে সবাই মনে করেন। পর্যটন বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশে  বিদেশি পর্যটকদেও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এক হিসেবে দেখা গেছে পর্যটকগন প্রতি বছর গড়ে ৪৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় কওে পর্যটককালীন থাকা ও খাওয়া বাবদ এই শিল্পে প্রায় ১২ কোটি মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ কোটি লোকের।প্রতি বছর পর্যটন শিল্পে গড়ে ১৬ মতাংশ হাওে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। অন্য এক তথ্যে জানা গেছে -১৯৯৭ সালে  হতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে মোট ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩ শ ৩০ জন বিদেশি পর্যটক আমাদের দেশে এসেছেন। এদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ৯৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৪ শ২০ জন পর্যটক বাংলাদেশে আসে এবং এবাবদ আয় হয় ২শ৭৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।  অন্যদিকে ২০০২ ও ২০০৩ সালে আগত পর্যটক ও এবাবদ আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ২ শ ৪৬ জন ও ২ লাখ***৪২ হাজার ৫ শ ৪৬ জন এবং ৩ শ৩১কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ৩ শ৩১ কোটি টাকা। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্পেরবিকাশ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদেও দেশে এ উদ্যোগ খুবই কম। ফলে এ শিল্প যতটা প্রসারিত হৗয়ার কথা ততটা হচ্ছে না। এব্যাপারে দশের একটি শীর্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটেকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন- –আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পে বিকাশের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। সরকারি পর্যায়ে অবকাঠামোগত সুবিধা দেয়া হলে এ শিলাপ দ্রæত বিকশিত হতে পারে। তবে বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালেকে পর্যটন বছর হিসেবে পালন করছে। এউপলক্ষে পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকার কাজ করছে।  পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  এগুলো হলো কুয়াকাটা ইয়ুথ ইন ও মোটেল নির্মাণ , দিনাজপুর পর্যটন মোটেলের সম্প্রসারণ , ও কান্তজীর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন সুবিধা প্রবর্তন। এছাড়া পরিকল্পনাধীন রয়েছেঃগোপালগজ্ঞের টুঙ্গিপাড়ার বহুমুখী ব্যবহারউপযোগী আšর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র নির্মান  , কুয়াকাটায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ , বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় পর্যটন সুবিধা প্রবর্তন , সরকার ১২টি দেশের কাইন্সিলরদের কে পর্যটন আকর্ষণে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ও এব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত। এছাড়া যেসব এলাকায় পর্যটন কেন্দ্রগলো অবস্থিত সেখানকার জনগণের ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। লেখক ঃপ্রভাষক ও সাংবাদিক , কুমিল্লা।  




Post a Comment

0 Comments

0
বাংলাদেশের  বৈদেশিক মুদ্রা অর্জণে পর্যটন
মমিনুল ইসলাম মোল্লা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে ভোট দিয়ে প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্য নির্বাচন সকলকে ভোট প্রদানের আহবান জানিয়েছেন। তিনি এব্যাপারে অন্যান্য দেশেরও সহায়তা চেয়েছেন। সুন্দরবনকে ভোট দেয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
সুন্দরবনের সবচেয়ে দর্শনীয় স্পটগুলো হচ্ছে ঃ করমজল , হারবারিয়া , জোংড়া , কটকা , কচিখালি , নীলকমল , হিরণপয়েন্ট , ও দুবলারচর। তথ্য এং সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ বলেছেন-প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চার্য নির্বাচনে সুন্দরবন বিজয়ী হলে তা বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জবল করবে এবং দেশে পর্যটন শিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। পর্যটন  শুধুই বিনোদনই  নয় এটি শিক্ষা ও জ্ঞাণার্জণের মাধ্যম। পাঠ্য পুস্তকে একটি বিষয় শতবার পড়ে যা জানা যায় সে স্থান একবার দেখেই তা ভালভাবে অনুধাবন করা যায়। তাই উন্নত দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষা সফরকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-তুমি কি দেখনি আল্লাহ আকাশে  থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করেন। অতপর তদ্ধারা আমি বিভিন্ন বর্ণের ফলমূল উদগত করি। পর্বতসমুহের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন বর্ণের গিরিপথ  , সাদা , লাল , ও নিকষ কালো  , । অনুরুপভাবে বিভিন্ন বর্ণের মানুষ , জন্তু , চতুষ্পদ প্রাণী রয়েছে। আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে জ্ঞাণীরা  তাকে ভয় করে। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী ক্ষমাময় (সুরা ফাতির ২৭/২৮)। পর্যটনকে জ্ঞাণার্জণের মাধ্যম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এব্যাপারে পবিত্র হাদিসে বলা হয়েছে -যে জ্ঞার্ণ্জণের জন্য ঘর থেকে পথে বের হবে সে যেন আল্লাহর পথে বের হলো।”  বিশিষ্ট পর্যটক ইবনে বতুতা বলেন -ভ্রমণ ¯্রষ্টার সৃষ্টি রহস্য জানায় । ভ্রমণ আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়ায় । প্রতিটি মানুষ স্ব স্ব সাধ্যানুসারে কাছে কিংবা দূওে ,  দেশে বা বিদেশে ভ্রমণ বা পর্যটনের মাধ্যমে ¯্রষ্টার বৈচিত্রময় সৃষ্টিকে দেখে অন্তরকে ***বিকশিত করা উচিত। পর্যটন একটি অর্থনৈতিক খাত। বিদেশি মুদ্রা অর্জণের একটি উৎকৃষ্ট মাধ্যম। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ পর্যটনের মাধ্যমে অনেক এগিয়ে গেছে। কোন কোন দেশ এখাত থেকে তাদের জাতীয় আয়ের অর্ধেক অর্থ অর্জণ করে। বাংলাদেশের পর্যটনশিল্প সম্ভাবনাময়। সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটনোপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা হলে আমাদের দেশও পর্যটনশিল্পে বেশ এগিয়ে যেতে পারবে। আমাদের প্রতিবেশী দেশ নেপাল তাদের জাতীয় আয়ের ৪০ % অর্জণ করে পর্যটন খাত থেকে। বিশ্বের সবচেয়ে  বড় পর্বত হিমালয় নেপালে অবস্থিত । মাউন্ট এভারেস্ট দেখা ও তাতে আরোহণের জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে বহু লোক নেপালে আসে। নেপালের পাশাপাশি ভারত ও পর্যটনশির্পে বেশ এগিয়ে আছে। পর্যটন এমনই এক শিল্প খাত যেখানে নতুন করে কোন কিছু সৃষ্টি করার প্রয়োজন হয় না। প্রকৃতি প্রদত্ত উপকরণকে শুধু রুপান্তরের মাধ্যমে পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলা হলেই এই খাত থেকে অর্থ আয় করা সম্ভব। এক তথ্যে জানা যায় -২০০০ সালে মোট ৬২ কোটি মানুষ বিশ্বের বিভিন্ন স্থান ভ্রমণ করে। ২০১০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ১০০ কোটি।***

বাংলাদেশের পর্যটনকেন্দ্রগুলো অপরিকল্পিতভাবে সাজানো হয়েছে। পরিকল্পনাহীন  কাজ কর্মের জন্য প্রাকৃতিক মনোরম স্থানগুলোও পর্যটকদের জন্য অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।  বিদেশী পর্যটকদের জন্য উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলার জন্য পর্যটনকেন্দ্রের  কাছাকাছি যায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হচ্ছে। এতে হীতে বিপরীত হচ্ছে। এব্যাপারে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগের প্রধান অধ্যাপক শাহেদা রহমান জানান , অন্যান্য দেশে সাধারণত প্রতœস্থল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ত পর্যটন বিভাগের থাকেনা। এসব দেশে চেষ্টা করা হয় প্রতœস্থল এর চারপাশ যতটা সম্ভব উন্মুক্ত রাখার । ক্ষতির হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বাংলাদেশের বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার । এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ সমুদ্র সৈকত। এটি সপ্তাশ্চার্যের তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এখানে বিদেশি পর্যটকদের আসা যাওয়া কমে গেছে। প্রয়োজনীয় ব্যসস্থাও স্বাচ্ছন্দের অভাব ও নিরাপত্তার অভাব এর জন্য দায়ী। এছাড়া সাগরের ঢেউ দেখা ***বাদে বিদেশিদের আকৃষ্ট করার মতো তেমন কোন স্পট এখানে গড়ে তোলা হয়নি। তাই বিদেশিরা কক্সবাজারের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন না। এছাড়া কক্সবাজারসহ বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। এটি বিদেশীরা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। এজন্যই বাংলাদেশের মানুষ সিঙ্গাপুরে গেলে প্রথম প্রথম জরিমানা দিতে হয়। কারণ রাস্তার পাশে কলার খোসা ফেলা আমাদের অভ্যাস হয়ে গেছে।কিন্তু কেউ কি চিন্তা করেছেন এই খোসায় আছাড় খেয়ে যে কেউ বিপদে পড়তে পারেন। এজন্য সেদেশে গেলে জরিমানা গুণতে হয়। আর আমাদেদের দেশে? এটি কোন ব্যাপারই নয়। পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে গেলে দেখা যায়  কলার খোসা , পলিথিন , কাগজের টুকরা , খাবার প্যাকেট , বাদামের খোসা ,সহ বহু আবর্জনা যত্র তত্র পড়ে আছে। তাই নয় কোন কোন যায়গায় খোলামেলা  মলমূত্র ত্যাগের দৃশ্য ও চোখে পড়ে। যা দেখে বিদেশি পর্যটকগন মনক্ষুণ্ণ হন এবং আমাদের প্রতি তাদের ঘৃণা জন্মে।***বিদেশিরা বাংলাদেশে এসে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগেন। প্রায় সময় আমরা পত্রিকার পাতায় দেখতে পাই ছিনতাইকারীর কবলে বিদেশি পর্যটক। কোন বিদেশি পর্যটক আর্থিকভাবে ক্খতিগ্রস্ত হলে তারা দ্বিতিয়বার এদেশে আসবেন না । একথাটি চিন্তা করে সরকার কক্রবাজারে টুরিস্ট পুলিশ গঠন করছে। এব্যবস্থা ধীরে ধীরে বাংলাদেশের অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোতেও করা হবে বলে জানা গেছে।শুধুমাত্র বিদেশি নয় দেশিয় পর্যটকগনও এসমস্যায় পড়েন। পর্যটকবাহী গাড়ীকে  আটকে দেয়া হয়। কিছু না দিলে রাস্তা বন্ধ করে রাখে এবং দুর্ব্যবহার করে। এজন্য কেউ মহিলা নিয়ে ঘুরতে চাননা। মহিলা নিয়ে গেলে তাদেও তৎপরতা যেন আরো বেড়ে যায়। তাই দেেশর সকল পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটন পুলিশের ব্যবস্থা করলে নারী পর্যটকদেও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আমাদের দেশের পর্যটন সেক্টেওে পর্যটক সহযোগী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত লোকের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত এনএইচটিটি আই টুরিজম সেক্টওে দেশের একমাত্র প্রতিষ্ঠান । এছাড়া পর্যটন কর্পোরেশনে হোটেল ***ও টুরিজম সংক্রান্ত ১১ টি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে।কিন্তু এগুলো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই সামান্য। সরকারি ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় আরো অধিক প্রশিক্ষণদানকারী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা উচিত বলে সবাই মনে করেন। পর্যটন বান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে পারলে বাংলাদেশে  বিদেশি পর্যটকদেও সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। এক হিসেবে দেখা গেছে পর্যটকগন প্রতি বছর গড়ে ৪৬ হাজার কোটি মার্কিন ডলার ব্যয় কওে পর্যটককালীন থাকা ও খাওয়া বাবদ এই শিল্পে প্রায় ১২ কোটি মানুষের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান রয়েছে। পরোক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে অন্তত ৬০ থেকে ৭০ কোটি লোকের।প্রতি বছর পর্যটন শিল্পে গড়ে ১৬ মতাংশ হাওে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে। অন্য এক তথ্যে জানা গেছে -১৯৯৭ সালে  হতে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ৭ বছরে মোট ১৩ লাখ ৮৫ হাজার ৩ শ ৩০ জন বিদেশি পর্যটক আমাদের দেশে এসেছেন। এদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আয় করেছে ১ হাজার ৯৫৫ কোটি ১৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৯৯৭ সালে মোট ১ লাখ ৮২ হাজার ৪ শ২০ জন পর্যটক বাংলাদেশে আসে এবং এবাবদ আয় হয় ২শ৭৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।  অন্যদিকে ২০০২ ও ২০০৩ সালে আগত পর্যটক ও এবাবদ আয়ের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৭ হাজার ২ শ ৪৬ জন ও ২ লাখ***৪২ হাজার ৫ শ ৪৬ জন এবং ৩ শ৩১কোটি ২৬ লাখ টাকা ও ৩ শ৩১ কোটি টাকা। বিশ্বের প্রতিটি দেশেই বেসরকারি উদ্যোগে পর্যটন শিল্পেরবিকাশ হয়েছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদেও দেশে এ উদ্যোগ খুবই কম। ফলে এ শিল্প যতটা প্রসারিত হৗয়ার কথা ততটা হচ্ছে না। এব্যাপারে দশের একটি শীর্ষস্থানীয় ট্যুর অপারেটেকারী সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ কালে তিনি বলেন- –আমাদের দেশে পর্যটন শিল্পে বিকাশের সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। সরকারি পর্যায়ে অবকাঠামোগত সুবিধা দেয়া হলে এ শিলাপ দ্রæত বিকশিত হতে পারে। তবে বেসরকারি পর্যটন সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালেকে পর্যটন বছর হিসেবে পালন করছে। এউপলক্ষে পর্যটন শিল্প বিকাশে সরকার কাজ করছে।  পর্যটন শিল্পের বিকাশের জন্য ৩টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।  এগুলো হলো কুয়াকাটা ইয়ুথ ইন ও মোটেল নির্মাণ , দিনাজপুর পর্যটন মোটেলের সম্প্রসারণ , ও কান্তজীর মন্দির সংলগ্ন এলাকায় পর্যটন সুবিধা প্রবর্তন। এছাড়া পরিকল্পনাধীন রয়েছেঃগোপালগজ্ঞের টুঙ্গিপাড়ার বহুমুখী ব্যবহারউপযোগী আšর্জাতিক মানের পর্যটনকেন্দ্র নির্মান  , কুয়াকাটায় ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ , বঙ্গবন্ধু সেতু এলাকায় পর্যটন সুবিধা প্রবর্তন , সরকার ১২টি দেশের কাইন্সিলরদের কে পর্যটন আকর্ষণে বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ও এব্যাপারে এগিয়ে আসা উচিত। এছাড়া যেসব এলাকায় পর্যটন কেন্দ্রগলো অবস্থিত সেখানকার জনগণের ও আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন। লেখক ঃপ্রভাষক ও সাংবাদিক , কুমিল্লা।  




Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.