ধান-নদী-খাল মিলে বরিশাল

ধান-নদী-খাল মিলে বরিশাল

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
রূপময় বাংলাদেশ। বাংলার প্রতিটি জেলায় রয়েছে চোখ ধাঁধাঁনো রূপ। তাই আপনার চোখকে ধন্য করার জন্য বেড়িয়ে পড়–ন। এ পর্যায়ে যেতে পারেন ঠাকুরগাঁও। বেড়ানোর জন্য সুন্দর জায়গা হল ঠাকুরগাঁও।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যেতে চাইলে বিমানে বা বাসে যেতে পারেন। বিমানে সরাসরি যেতে না পারলেও ঠাকুরগাঁওয়ের কাছাকাছি সৈয়দপুর যেতে পারবেন। সেখান থেকে বাসে এক ঘন্টা চড়ে যেতে পারবেন ঠাকুরগাঁও। যদি ঢাকা থেকে সরাসরি যেতে চান খালেক এন্টারপ্রাইজ এ যেতে পারেন। সকাল ৭ টার বাসে উঠতে পারলে পৌছবেন বিকাল ৪টায়।

যেখানে থাকবেনঃ ভাল কোন হোটেন না পেলেও ১০০ টাকার মধ্যে দু’জন থাকতে পারবেন সাদেক হোটেল, হোটেল অথবা টাংগন বোর্ডিং এ। সরকারি রেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে শুনবেন- এখানে প্রভাবশালী হিন্দু পুরুহিত ঠাকুর পরিবার বাস করতেন। কালক্রমে এই প্রভাবশালী পুরুহিত ঠাকুর পরিবারের নামে ঠাকুরগাঁও জেলার নামকরণ করা হয়।
যা যা দেখবেনঃ
(১) মসজিদ (জামালপুর)ঃ জেলা সদর থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামাল পুরে জমিদার বাড়ির মসজিদটি অবস্থিত। দু’শ বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি কারুকার্যমন্ডিত।
তৎকালীন জমিদার আব্দুল হালিমের তত্ত¡াবধানে ১৭৮০ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তার মৃত্যুর পর হাজী নুনু মোহাম্মদ কাজ শুরু করেন। ১৮০১ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ মসজিদে ৩টি গম্বুজ ও চারদিকে ২৪টি মিনার রয়েছে। হিন্দু প্রকৌশলী হংসরাজ এটি দিল্লী, আগ্রা ও এলাহাবাদের বিভিন্ন মসজিদ অনুসরণে এটি করেছিলেন। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। এক সাথে ৩শ মুসল্লী এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।
(২) রামচন্দ্র মন্দির (রানী সংকৈল)ঃ প্রায় দুশোর বছর পূর্বের রামচন্দ্র মন্দিরটি দেখুন। এটি ঠাকুরগাঁও জেলার রানী সংকৈল থানা বন্দরের প্রবেশমুখে কুলিক নদীর তীরবর্তী মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী বেষ্টিত সু-বিশাল চত্বরজুড়ে এটি অবস্থিত। সতের শতাব্দীর শেষ ভাগে রানী সংকৈলের মালদোয়ার স্টেটের জমিদার শ্রী টংকনাথ চৌধুরী গয়া কাশি বৃন্দাবন থেকে সংগৃহীত মূল্যবান পাথর ব্যবহার করে মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
মন্দিরটি ঘুরে-ফিরে দেখবেন। এটি দ্বিতল বিশিষ্ট চৌকোণা গম্বুজ আকৃতির। পতিটি দেয়ালে পাথরে খোদাই করে দেবতাদের বিগ্রহ অঙ্কিত রয়েছে। উপর তলায় সাজানো রাম, লক্ষণ, সীতা, দশরথ, সুমিত্রা, কৈকি ও ভরতের বিগ্রহ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করত। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলার উল্লেখ্যযোগ্য মন্দিরগুলো হচ্ছে গোবিন্দ জিউ মন্দির (সদর)। রানীশংকৈলের রয়েছে গোরক্ষনাথ মন্দির। রানীশংকৈলের নেকমরদ হতে ৫ কিঃমিঃ পশ্চিমে অবস্থিত “গোরকই” নামক স্থানে মন্দিরটি। এখানে নাশ মন্দির ছাড়াও ৩টি শিবমন্দির ও ১টি কালিমন্দির রয়েছে।
(৩) অলৌকিক ক‚প (রাণীশংকৈল)ঃ রাণীশংকৈলের গোরক্ষনাথ মন্দিরের পেছনে একটি অলৌকিক ক‚প দেখতে পাবেন। এখানে হাজার হাজার নরনারী পূণ্য¯œান করতে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এ ক‚পের পানি কমেনা। ক‚পটি ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখবেন এটি পাথর দিয়ে তৈরী। এখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মেলা বসে। মেলায় আগত হিন্দু নরনারী পাপ মোচনের জন্য এ ক‚পে গোসল করে।
(৪) গোরক্ষ পান্থশালা (রাণীশংকৈল)ঃ ক‚পের পাশেই দেখবেন একটি গান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক ছিল। বর্তমানে এটি দিনাজপুর জাদুঘরে রক্ষিত আছে। পান্থশালাটি দেখতে দেখতে জানবেন, গোরক্ষনাথ ছিলেন নাথ পন্থীদের ধর্মীয় নেতা খীননাথের শিষ্য। কেউ কেউ হয়তো বলবেন গোরক্ষনাথ কারো নাম নয় একটি উপাধি।
(৫) রক্তাক্ত বধ্যভ‚মি (খুনিয়াদিঘি)ঃ গাছের ডালে একজন লোককে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে তার গায়ের চামড়া খুলে নিচ্ছেলো আর ক্ষতস্থানে মাঝে মাঝে লবন ছিটিয়ে দিচ্ছিল। এমন সময় আরেকটি ভ্যানে করে কয়েকজনকে হাত-পা বেধে নিয়ে আসা হলো। তাদেরও একই অবস্থা হলো। এমনই বর্ণনা শুনবেন রাণীশংকৈল গ্রামের বধূভ‚মির প্রত্যক্ষদর্শী ভান্ডারা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মুখে। আরো শুনবেন মুক্তিযোদ্ধ শেষ হওয়ার পর এখানে পাওয়া গিয়েছিল ৫ হাজার ৭৩৯টি মাথার খুলি। খুনিয়াদিঘি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করবেন না।
(৬) টঙ্কনাথের বাড়ী (রাণীশংকৈল)ঃ আগের মতো জৌলুস না থাকলেও রাজবাড়ীটি এখনও পূর্ব বাংলার রাজা টঙ্কনাথের রাজপ্রাসাদটি তার স্মৃতি বহন করছে। তিনি প্রজাদরদী ছিলেন। হাতির পিঠে চড়ে প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন।
(৭) নৌবিহার (টাংগন নদী)ঃ ঠাকুরগাঁওয়ের টাংগন নদীতে নৌবিহার  করুন। এবং উপর রয়েছে টাংগন ব্রীজ। এটি পায়ে হেটে পার হতে ৫ মিনিট লাগবে।
আরো দেখুন বিমানবন্দর, চিনির কল, ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, পিকনিক কর্ণার কুমিল্লার বাড়ী, পীর নেকমরদের মাজার ইত্যাদি।



Post a Comment

0 Comments

0

ধান-নদী-খাল মিলে বরিশাল

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
রূপময় বাংলাদেশ। বাংলার প্রতিটি জেলায় রয়েছে চোখ ধাঁধাঁনো রূপ। তাই আপনার চোখকে ধন্য করার জন্য বেড়িয়ে পড়–ন। এ পর্যায়ে যেতে পারেন ঠাকুরগাঁও। বেড়ানোর জন্য সুন্দর জায়গা হল ঠাকুরগাঁও।

যেভাবে যাবেনঃ ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যেতে চাইলে বিমানে বা বাসে যেতে পারেন। বিমানে সরাসরি যেতে না পারলেও ঠাকুরগাঁওয়ের কাছাকাছি সৈয়দপুর যেতে পারবেন। সেখান থেকে বাসে এক ঘন্টা চড়ে যেতে পারবেন ঠাকুরগাঁও। যদি ঢাকা থেকে সরাসরি যেতে চান খালেক এন্টারপ্রাইজ এ যেতে পারেন। সকাল ৭ টার বাসে উঠতে পারলে পৌছবেন বিকাল ৪টায়।

যেখানে থাকবেনঃ ভাল কোন হোটেন না পেলেও ১০০ টাকার মধ্যে দু’জন থাকতে পারবেন সাদেক হোটেল, হোটেল অথবা টাংগন বোর্ডিং এ। সরকারি রেস্ট হাউজেও থাকতে পারেন।
ঠাকুরগাঁওয়ে গিয়ে শুনবেন- এখানে প্রভাবশালী হিন্দু পুরুহিত ঠাকুর পরিবার বাস করতেন। কালক্রমে এই প্রভাবশালী পুরুহিত ঠাকুর পরিবারের নামে ঠাকুরগাঁও জেলার নামকরণ করা হয়।
যা যা দেখবেনঃ
(১) মসজিদ (জামালপুর)ঃ জেলা সদর থেকে ১৪/১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে জামাল পুরে জমিদার বাড়ির মসজিদটি অবস্থিত। দু’শ বছরের প্রাচীন এই মসজিদটি কারুকার্যমন্ডিত।
তৎকালীন জমিদার আব্দুল হালিমের তত্ত¡াবধানে ১৭৮০ সালে মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তার মৃত্যুর পর হাজী নুনু মোহাম্মদ কাজ শুরু করেন। ১৮০১ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হয়। এ মসজিদে ৩টি গম্বুজ ও চারদিকে ২৪টি মিনার রয়েছে। হিন্দু প্রকৌশলী হংসরাজ এটি দিল্লী, আগ্রা ও এলাহাবাদের বিভিন্ন মসজিদ অনুসরণে এটি করেছিলেন। এ মসজিদের দৈর্ঘ্য ৪১ ফুট ৬ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১১ ফুট ৯ ইঞ্চি। এক সাথে ৩শ মুসল্লী এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারেন।
(২) রামচন্দ্র মন্দির (রানী সংকৈল)ঃ প্রায় দুশোর বছর পূর্বের রামচন্দ্র মন্দিরটি দেখুন। এটি ঠাকুরগাঁও জেলার রানী সংকৈল থানা বন্দরের প্রবেশমুখে কুলিক নদীর তীরবর্তী মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী বেষ্টিত সু-বিশাল চত্বরজুড়ে এটি অবস্থিত। সতের শতাব্দীর শেষ ভাগে রানী সংকৈলের মালদোয়ার স্টেটের জমিদার শ্রী টংকনাথ চৌধুরী গয়া কাশি বৃন্দাবন থেকে সংগৃহীত মূল্যবান পাথর ব্যবহার করে মন্দিরটি নির্মাণ করেন।
মন্দিরটি ঘুরে-ফিরে দেখবেন। এটি দ্বিতল বিশিষ্ট চৌকোণা গম্বুজ আকৃতির। পতিটি দেয়ালে পাথরে খোদাই করে দেবতাদের বিগ্রহ অঙ্কিত রয়েছে। উপর তলায় সাজানো রাম, লক্ষণ, সীতা, দশরথ, সুমিত্রা, কৈকি ও ভরতের বিগ্রহ সবার দৃষ্টি আকর্ষন করত। এ ছাড়া ঠাকুরগাঁও জেলার উল্লেখ্যযোগ্য মন্দিরগুলো হচ্ছে গোবিন্দ জিউ মন্দির (সদর)। রানীশংকৈলের রয়েছে গোরক্ষনাথ মন্দির। রানীশংকৈলের নেকমরদ হতে ৫ কিঃমিঃ পশ্চিমে অবস্থিত “গোরকই” নামক স্থানে মন্দিরটি। এখানে নাশ মন্দির ছাড়াও ৩টি শিবমন্দির ও ১টি কালিমন্দির রয়েছে।
(৩) অলৌকিক ক‚প (রাণীশংকৈল)ঃ রাণীশংকৈলের গোরক্ষনাথ মন্দিরের পেছনে একটি অলৌকিক ক‚প দেখতে পাবেন। এখানে হাজার হাজার নরনারী পূণ্য¯œান করতে আসেন। আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে এ ক‚পের পানি কমেনা। ক‚পটি ভাল করে লক্ষ্য করলে দেখবেন এটি পাথর দিয়ে তৈরী। এখানে একটি নির্দিষ্ট সময়ে মেলা বসে। মেলায় আগত হিন্দু নরনারী পাপ মোচনের জন্য এ ক‚পে গোসল করে।
(৪) গোরক্ষ পান্থশালা (রাণীশংকৈল)ঃ ক‚পের পাশেই দেখবেন একটি গান্থশালা। পান্থশালার দরজায় একটি ফলক ছিল। বর্তমানে এটি দিনাজপুর জাদুঘরে রক্ষিত আছে। পান্থশালাটি দেখতে দেখতে জানবেন, গোরক্ষনাথ ছিলেন নাথ পন্থীদের ধর্মীয় নেতা খীননাথের শিষ্য। কেউ কেউ হয়তো বলবেন গোরক্ষনাথ কারো নাম নয় একটি উপাধি।
(৫) রক্তাক্ত বধ্যভ‚মি (খুনিয়াদিঘি)ঃ গাছের ডালে একজন লোককে রশি দিয়ে ঝুলিয়ে তার গায়ের চামড়া খুলে নিচ্ছেলো আর ক্ষতস্থানে মাঝে মাঝে লবন ছিটিয়ে দিচ্ছিল। এমন সময় আরেকটি ভ্যানে করে কয়েকজনকে হাত-পা বেধে নিয়ে আসা হলো। তাদেরও একই অবস্থা হলো। এমনই বর্ণনা শুনবেন রাণীশংকৈল গ্রামের বধূভ‚মির প্রত্যক্ষদর্শী ভান্ডারা গ্রামের ইসমাইল হোসেনের মুখে। আরো শুনবেন মুক্তিযোদ্ধ শেষ হওয়ার পর এখানে পাওয়া গিয়েছিল ৫ হাজার ৭৩৯টি মাথার খুলি। খুনিয়াদিঘি স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে ভুল করবেন না।
(৬) টঙ্কনাথের বাড়ী (রাণীশংকৈল)ঃ আগের মতো জৌলুস না থাকলেও রাজবাড়ীটি এখনও পূর্ব বাংলার রাজা টঙ্কনাথের রাজপ্রাসাদটি তার স্মৃতি বহন করছে। তিনি প্রজাদরদী ছিলেন। হাতির পিঠে চড়ে প্রজাদের সুখ-দুঃখের খবর নিতেন।
(৭) নৌবিহার (টাংগন নদী)ঃ ঠাকুরগাঁওয়ের টাংগন নদীতে নৌবিহার  করুন। এবং উপর রয়েছে টাংগন ব্রীজ। এটি পায়ে হেটে পার হতে ৫ মিনিট লাগবে।
আরো দেখুন বিমানবন্দর, চিনির কল, ইক্ষু গবেষণা কেন্দ্র, পিকনিক কর্ণার কুমিল্লার বাড়ী, পীর নেকমরদের মাজার ইত্যাদি।



Post a Comment

Dear readers, after reading the Content please ask for advice and to provide constructive feedback Please Write Relevant Comment with Polite Language.Your comments inspired me to continue blogging. Your opinion much more valuable to me. Thank you.