ঘুরে দেখুনঃ হাছন রাজার সুনামগঞ্জ
মোঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা।গারো আর খাসিয়া পাহাড়ের পাদদেশে পুরাতন সুরমা, কুশিয়ারা, বলাই, জালালপুর, সুমেশ্বরী নদী বিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর জেলা সুনামগঞ্জ। হাছর রাজার স্মৃতি ধন্য সুনামগঞ্জ গিয়ে আপনি নতুন অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারবেন।
যেভাবে যাবেনঃ আন্তঃনগর ট্রেন পারাবতে যেতে চাইলে নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন। পারাবত ছাড়ে সকাল ৬.৪০ মিনিটে, ইচ্ছে করলে আগের দিন অগ্রীম টিকেট কিনে রাখতে পারেন। সঠিক সময়ে ট্রেন ছাড়লে দুপুর ২টায় গিয়ে পৌছঁবেন সিলেটে। কোস্টারে সুনামগঞ্জ যেতে সময় লাগবে আরো দেড় ঘন্টা। এ ছাড়া ঢাকার সায়দাবাদ থেকে “মিতালী” সার্ভিসে সরাসরি সুনামগঞ্জে যেতে পারেন।
যেখানে থাকবেনঃ থাকা ও খাওয়ার জন্য হোটেল নূরানী (পুরাতন বাস স্টেশন) হোটেল মধুমতি (মুক্তারপাড়া) অথবা হোটেল নূরের (ষ্টেশান রোড) উপর নির্ভর করতে পারেন। ভ্রমনের সময় আপনার কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা হলে সদর রোডে অবস্থিত সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করতে পারেন।
এ হাওরের আয়তন ২৪ হাজার একর। গাছ-গাছালির ছায়ার ঘেরা, পাখ-পাখালির গুঞ্জনে মুখর এ হাওয়রটি ঘুড়েফিরে দেখতে পারেন।
(১) পাখি অভয় আরণ্য (বিরামপুর)ঃ সুনামগঞ্জ জেলা শহর থেকে ৬ কিলিমিটার পূর্বে বিরামপুরে শীতকালে গেলে দেখবেন অসংখ্য চেনা অচেনা পাখি। বিশেষকরে আবদুছ শহীদের বাড়ীটিকে বলা হয় “পাখি বাড়ী”। সারাদিন চড়ে বেড়ানোর পর আকাশ ঢেকে ঘড়ে ফিরে ঝাঁকে ঝাঁকে সাদা বক, মাগরিবের আজানের সময় তারা চারপাশের গাছগুলো ছেয়ে ফেলে। তখন গাছের পাতার পরিবর্তে পাখির পাখার যাপটানো দেখা যায়। গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে ইচ্চেমত ছবি উঠাতে পারবেন। তবে সাবধান! কোন পাখির ক্ষতি করার চেষ্টা করলে ১,০০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে। অয়েক বছর পূর্বে এলাকাবাসী এ নিয়ম করে।
(২) মনীষীর (হাছন রাজা) বাড়ী ঃ সুনামগঞ্জের অন্যতম আকর্ষণ হাছন রাজার বাড়ী। তবে বাড়ীটির বাহ্যিক দিক আকর্ষণীয় নয়। বিশিষ্ট জমিদার ও গীতিকাব্য হাছন রাজা বিলাসিতা পছন্দ করতেন না। তিন লক্ষ বিঘার জমিদারি থাকলেও তিনি থাকতেন কুড়ে ঘরে। কুড়ে ঘরের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জনসাধারণ বলা বলি করত: রাজার ঘর বাড়ী ভাল না। এ কথা শুনে হাছন রাজা লিখলেনঃ “লোকে বলে, বলেরে ঘর বাড়ী ভালা না আমার/ কি ঘর বানাইব আমি শূণ্যর মাজার”। সেখানকার শিল্পিদের মুখে গানটি শুনে তৃপ্ত হবেন। “হাছন উদাস” ও “সৌখিন বাহার” নামে হাছন রাজার দুই বই ছাপা হয়েছিল। এ গুলো সেখানে খোঁজ করলে পেতে পারেন। হাছন রাজার বংশধরগণ তার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি তিন তলা বাড়ী নিমার্ণ করে রেখেছেন। হাছন রাজার বসত বিটা দেখার পর তার ব্যবহৃত খরম, পোশাক, ছবি, তলোয়ার, প্লেট, খাতা, রূপার পানদানি, কলম ইত্যাদি দেখুন।
(৩) জমিদার বাড়ী (সুখাইর)ঃ প্রায় ৩০০ বছরের পুরনো জমিদার বাড়ীটি দেখুন। ১৯৬৫ সালে ২৫ একর জমি কিনে জমিদার মোহনলাল এ বাড়ীটি নির্মাণ করেন। এ জমিদারি বিস্তৃত ছিল পূর্বে জামালগঞ্জ, পশ্চিমে ধরমপাশা, উত্তরে বংশিকুঞ্জ, দক্ষিণে ঘাগলাজুরা নদী। সেখানে দিয়ে শুনবেন একবার ইংরেজ প্রশাসক বেলেন্টিয়ার বাঘ শিকারে টাঙ্গুয়ার হাওরে গেলে তাকে বাঘ জিম্বি করলে জমিদার সুযুখ চৌধুরী আইন লঙ্গন করে ৩টি বাঘ মেরে তাকে উদ্ধার করলে, ইংরেজ সাহেব তাকে একটি বন্দুক উপহার দেন। এছাড়া প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে ব্রিটিশ সরকারকে তিনি ১০ হাজার টাকার চাঁদা দেওয়ার সুখাইর জমিদারদের খ্যাতি বহুগুনে বেড়ে যায়।
(৪) মনোহারী স্থান (ছাতক)ঃ পাথর, সিমেন্ট, চুনা পাথর, তেজ পাতা, কমলালেবু ও বালুর দেশ ছাতক। সুনাগঞ্জের আম্বরখানা থেকে ছাতকের কোস্টার ছাড়ে। কোস্টারের ৪০ মিনিটের পৌছাঁতে পারেন ছাতকে। এখানে চুনা পাথর দেখে মুগ্ধ হবেন। চুনা পাথর বহনকারী যন্ত্রটি দেখে অভিভ‚ত হবেন। কি সুন্দরভাবে চুনাপাথর আসছে, নামছে। এ দৃশ্য দেখে দেখে হারিয়ে যাবেন স্বপ্নের রাজ্যে। চুনাপাথর কিভাবে পুরায় তা দেখতে পারেন।
(৫) মসজিদ (পাগলাবাজার)ঃ সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কের পাগলা বাজারের পাশে রায়পুর গ্রামে এই মসজিদটি অবস্থিত। ৩ গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদটি বৃত্তের ব্যবহার ছাড়া ইট ও সুড়কির তৈরি। সাড়ে ৩৩ গজ দীর্ঘ ও ২২ গজ প্রস্থ এই মসজিদটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন ইয়াসিন মির্জা ১৯৫১ সালে। ১৯৯২ ও ১৯৯৭ সালে মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
(৬) বালি (নারায়নতলা) ঃ বাংলা দেশের একটি উল্লেখযোগ্য স্থান নারায়নতলা, পাহাড় , নদী আর মরুভ‚মির সংমিশ্রনে আকর্ষনীয় স্থান এই নারায়নতলা। সুনামগঞ্জ জেলার উত্তরে দেশের সীমান্তে এর অবস্থান। দেশে থেকে যদি আপনি মরুভুমির স্বাদ পেতে চান, তাহলে এটি হবে উপযুক্ত যয়গা, বালুকা ময় এ স্থানটির উত্তরে রয়েছে আসামের পাহাড়সারি।
(৭) রিভার ভিউ (যাদু কাটা)ঃ তাহিরপুরে গিয়ে রিভারভিউ দেখতে পাবেন। বারিকের টিলার একেবারে গা ঘেঁষে পূর্ব পাশে বয়ে চলেছে পাহাড়ী নদী যাদুকাটা, সীমান্তের ওপর থেকে নেমে আসা এই পাহাড়ী নদীর স্বচ্ছ টলটলে পানির নীচে শুধু বালি আর পাথরের মজুত দেখতে পাবেন। আপনি ইচ্ছে করলে এই নদীতে বুটিং করতে পারবেন।
0 Comments